আশরাফের মা —— আচ্ছা ঠিক আছে দিচ্ছি।তুই যখন বলতে চাইছিস না তখন বলিস না।এখন যা তুই ফ্রেশ হয়ে আস।আমি খাবার বাড়তেছি।
আশরাফ —— হুম।
তারপর আশরাফের মা খাবার আনতে চলে যায়।আর আশরাফ ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ওর প্রচুর রাগ হচ্ছে।কিছুক্ষন পর বের হয়ে চুপচাপ খাবার খেয়ে ল্যাপটপে কাজ করা শুরু করে।কিন্তু কাজে মন বসছে না তাই চোখ বুঝে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন সকালে আফরা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে চলে যাই। গেটের কাছে আসতেই রাকিবের সাথে দেখা হয়।
রাকিব —— হাই আফরা। কেমন আছো?
আফরা —— ভালো।
রাকিব —— আমাকে জিজ্ঞাসা করলে না যে আমি কেমন আছি?
আফরা —— প্রয়োজন নেই। তাই করিনি।
রাকিব —— দেখো আফরা আমি জানি তোমার মন খারাপ।
আফরা —— আমার মন খারাপ, তোমায় বললো কে?
রাকিব —— কালকে স্যার তোমাকে ক্লাস থেকে বের করে দিসে তাই তোমার মন খারাপ তাই তো।
আফরা —— তোর মাথা।আমার কোন মন খারাপ টারাপ নাই।তুই যা তো এখান থেকে ।
এটা বলে আফরা পাশ কাটিয়ে চলে যাই।মাঠে আসতেই নিরার সাথে দেখা হয়।
নিরা —— এই আফরা,,,,,এইদিকে আয়।
আফরা —— কিরে তুই এইখানে কেনো?
নিরা ফাস্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলে ,,,,
নিরা —— দেখ এইটারে,,,,,
আফরা —— এইটা ফাস্ট ইয়ারে পড়ে না।
নিরা —— হুম।
আফরা —— কিন্তু ধরছিস কেনো ওরে।কি করছে ও?
নিরা —— দেখ,,,,ও তোরে চিঠি লিখছে।
আফরা —— কিসের চিঠি?
নিরা —— ভালোবাসার,,,,
আফরা —— কিহহ,,,,,,ওই ছেমড়া আমি তোর সিনিয়র তুই জানোস না।তবুও তুই আমারে চিঠি দেস কোন সাহসে হ্যা।
ছেলেটা —— সরি।আমার আপনাকে অনেক ভালো লাগে তাই আপনাকে চিঠি লিখছিলাম।আসলে আমি বুঝতে পারিনি।আপনি রেগে যাবেন।
আফরা —— বুঝতে পারিসনি মানে,,, এবার সবার সামনে কানে ধইরা উঠবস করবি তুই।আর আমি তোর আপু হই। তাই আমারে আপু বলবি।
ছেলেটা —— সরি আপু,,আমার ভুল হয়ে গেছে।,,,কানে ধরতে বইলোনা।প্লিজ।
আফরা —— তুই কানে ধরবি। আর একশোবার উঠবস ও করবি।যদি না করিস তাহলে আরো বড় শাস্তি দিমু তোরে।এখন বল তুই কানে ধরবি কি না।
ছেলেটা —— আচ্ছা আপু,,,,,,,,,,,আমি এখনি ধরছি।
এটা বলে ছেলেটা উঠবস করতে শুরু করলো।পঞ্চাশ বার করার পর ওর অবস্থা নাজেহাল। তখনই কোথা থেকে আশরাফ এসে ধমক দিয়ে বলল,,,,,
আশরাফ —— কি হচ্ছেটা কি এখানে?
সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখে আশরাফ ,,,আফরা মনে মনে বলছে ,,,,যেখানেই যাই পিছন পিছন ঠিক চইলা আসবে খাম্বাটা।
আফরা —— কেনো, এখানে যাই হোক তাতে আপনার প্রবলেম কি হ্যা।এখানে যা ইচ্ছা তাই হবে। আপনি আসছেন কেনো এখানে?
আশরাফ —— তোমরা ওকে এভাবে কানে ধরিয়ে উঠবস করাচ্ছো কেনো?
আফরা —— ও আমাকে…
নিরা —— আসলে স্যার এই ছেলেটা আফরাকে চিঠি দিছে।তাই আফরা ওরে শাস্তি দিচ্ছে।
আশরাফ —— কিসের চিঠি?
নিরা —— লাভ লেটার স্যার।
ছেলেটা —— সরি স্যার। আমি আর এমন করবোনা।আপু সত্যি সরি।
আফরা —— কোন সরি টরি না।উঠবস কর তুই।
আশরাফ —— তোমরা সবার সামনে এই ছেলেটাকে এভাবে অপমান করছো কেনো?ছেলেটা তো সরি বলছে নাকি?
আফরা —— তাতে কি হইছে।ওরে একশোবার উঠবস করতেই হবে।
আশরাফ —— এটা বেশি হয়ে যাচ্ছে।
আফরা —— আপনি এতো কথা কেনো বলছেন বলেন তো।
আশরাফ —— চুপ। আর একটা কথা ও না।যাও ক্লাসে যাও।
আফরা —— আমি যাবো না।
আশরাফ —— আমি যেতে বলেছি।
নিরা —— আফরা বেশি কথা বলিস না।চল স্যার রেগে গেছে।পরে আরো বকবে।
এটা বলে নিরা আফরাকে টেনে ক্লাসে নিয়ে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর আশরাফ ক্লাসে এসে পড়ানো শুরু করলো।সবাইকে পড়া জিজ্ঞাসা করছে।সবাইকে কতো সহজ সহজ প্রশ্ন ধরছে।আর আফরাকে এতো কঠিন একটা প্রশ্ন করছে যে আফরা বলতেই পারছে না।অথচ সবাইকে যা জিজ্ঞাসা করছে তা আফরা খুব ভালো করেই পারে।খালি আফরাকেই ইচ্ছা করে আনকমন একটা প্রশ্ন ধরছে যাতে আফরা না পারে।তাই আফরা মনে মনে গালি দিচ্ছে খাটাশ,বজ্জাত একটা।আফরাকে প্রশ্ন করে তাকিয়ে আছে।আর আফরাতো পারছে না রাগে দুঃখে কান্না করে দিতে।আফরা পারেনা দেখে আশরাফ আফরাকে পুরো ক্লাস দাড় করিয়ে রাখলো।আবার আশরাফ মাঝে মাঝে আফরার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।আফরার তা দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে।আফরা মনে মনে বলছে ,,,,ইচ্ছা করছে পচা পানিতে খাম্বাডারে চুবাইতে।আমি যদি এর শোধ না তুলছি তাহলে আমার নামও আফরা না।ক্লাস শেষ করে আফরা আর নিরা বাড়ি যাওয়ার সময় পার্কিং জোনে আশরাফের গাড়ি দেখে আফরার রাগটা আরো বেড়ে গেলো।তাই আফরা রাস্তার পাশে ইটের টুকরা দিয়ে দিলাম গাড়ির কাচ ভেঙে।
নিরা —— এইটা তুই কি করলিটা কি আফরা।
আফরা —— একদম ঠিক করছি।খাম্বায় আজকেও আমারে অপমান করছে।পুরা ক্লাস দাঁড়ায় ছিলাম।তুই কি ভাবছোস,,,,,খাম্বারে কি আমি এমনি এমনি ছাইড়া দিমু।
নিরা —— কিন্তু এইটা স্যারের গাড়ি ছিলো।স্যার যদি জানতে পারে তোরে কি করবো আল্লাহ্ই জানে।
আফরা —— স্যার আমারে কচু করবো।
নিরা —— আফরা পিছে তাকা।
আফরা —— কেনো রে।আমি পিছে তাকামু কেন।
নিরা —— তাকায়ায়ায়ায়া,,,,,,
আফরা —— দূর,,,ওকে তাকাচ্ছি,,,,
এটা বলে পিছে তাকিয়ে দেখে আশরাফ চোখ লাল করে দাঁড়িয়ে আছে।আফরা মনে মনে বলছে ,,,ওরে বাবারে খাম্বায় আমারে দেইখা ফেলছে রে।আজকে আমি শেষ।আশরাফ আসতে আসতে আফরার সামনে আসছে আর আফরা পিছনে যাচ্ছে ।
আফরা —— স্যার,, আআ,,,,,,,প,,,নি?
আশরাফ —— কি করছো তুমি?
আফরা —— কি কঅঅরছি কি আআয়ামিই,,,,
আশরাফ —— আমার গাড়ির কাচ ভাঙছে কে?
আফরা —— আমি,,,,,না মানে আমি আপনার গাড়ির কাচ ভাঙিনি স্যার।
আশরাফ —— তাই নাকি?
আফরা —— হ্যা স্যার।সত্যি আমি কেনো আপনার গাড়ির কাচ ভাঙতে যাবো।
আশরাফ —— তাহলে তোমরা এখানে কি করছিলে,,,,
আফরা —— হ্যা তাই তো কি করছিলাম আমরা?এই নিরা কি করছিলাম জেনো আমরা? ও হ্যা,,, মনে পড়েছে আসলে আমি আর নিরা এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম আর তখনই দেখলাম আপনার গাড়ির কাচ ভাঙা। আমরা ভাঙতে যাবো কেন।কি একটা গাড়ি তা নাকি আবার আমি ভাঙবো। হু,,,,,
আশরাফ চোখ মুখ লাল করে আফরার দিকে এগোচ্ছে।আফরা মনে মনে ভাবছে ,,,,কি ব্যাপার বুঝে গেলো নাকি,,,,
আশরাফ —— আজকে তোমাকে আমি,,,,,
আফরা —— স্যার ওইখানে কে যেনো,,,,,
আশরাফ পিছনে তাকাতেই আফরা নিরাকে নিয়ে দৌড়।পিছনে না তাকিয়ে এক দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসলো।
আশরাফ —— আফরা তোমাকে আমি দেখে নিবো।আমাকে মিথ্যা বলা,,,,
এভাবে কয়েকদিন কেটে যায়,,,,,এই কয়েকদিনে আশরাফ আর আফরা প্রচুর ঝগড়া করেছে।
একদিন দুপুরে,,,,,,
নিরা —— হ্যালো আফরা,,,,,কই তুই?
আফরা —— তোর শ্বশুরবাড়ি।
নিরা —— কিইই,,,,
আফরা —— বলদি, তুই জানিস না,,, আমি এখন কই।তাহলে আবার জিজ্ঞাসা করিস কেন?
নিরা —— জানি বাসায়।তবুও শিওর হওয়ার জন্য জিজ্ঞাস করলাম।
আফরা —— হুম,,,,এবার বল কি বলবি,,,,,
নিরা —— আজকে বিকালে তুই আর আমি বের হবো।সামনের পার্কটাতে।
আফরা —— কেন? তোর জামাইরে দেখতে।
নিরা —— আরেএ নাহ,,,,,,,আমার খুব ফুচকা খেতে ইচ্ছা করছে আর ঘুরতে ও।
আফরা —— আচ্ছা।ঠিক আছে,,,,,, বিকালে দেখা হচ্ছে।
নিরা —— ওকে,,,,,
তারপর আফরা রেডি হতে শুরু করে দেই।রেডি হতে হতে বিকাল হয়ে যায়।বিকালে আফরা আর নিরা সামনের পার্কে দেখা করে।
আফরা —— কিরে বলদি,,,তুইতো আজকে সেই সাজ দিয়েছিস।ব্যাপার কি হুম।মনে হচ্ছে আমার দুলাভাই পেয়ে গেছি তাই নারে,,,,,,
নিরা —— আরে নাহ,,,,,এখনো পাইনি।কিন্তু যদি এইখানে পেয়ে যাই।
আফরা —— ওরে আমার লজ্জাবতী লতারে।কি লজ্জা পাচ্ছে। একেবারে তোকে নতুন বউ বউ লাগছে।
নিরা —— চুপ কর ফাজিল মাইয়া।আচ্ছা চল না ফুচকা খাই।
আফরা —— হুম,,,, চল।
তারপর দুইজন মিলে ফুচকা খাচ্ছে তখন দেখে আশরাফ পার্কের একপাশে একটা গাছের নিচে ঘাসের উপর বসে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে।অন্যদিকের কোন খবর নেই।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপের স্কিনের দিকে।তখন আফরার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে।তারপর পার্কেরই কিছু ছোট ছোট গরিব ছেলেমেয়ে যারা ফুল বা অন্যকিছু বিক্রি করে ওদের এক সাথে করে আশরাফকে দেখিয়ে বললো,,,,,
আফরা —— ওই ভাইয়াটাকে দেখছিস তোরা।ওই ভাইয়াটা আমাকে বলছে তোদের সবাইকে আইসক্রিম খাওয়াবে।তাই তোরা সবাই ওই ভাইয়াটার কাছে গিয়ে বলবি আইসক্রিম খাওয়াতে।এখন হয়তো ভুলে গেছে।তোরা সবাই একটু জোরাজুরি করলেই ভাইয়াটার মনে পড়ে যাবে।আর তখন খাওয়াবে কেমন।
বাচ্চারা সবাই একসাথে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।
নিরা —— কি করছিসটা কি তুই।স্যার যদি পরে রেগে যায়।ওদের না খাওয়ায় তখনতো ওরা কষ্ট পাবে।
আফরা —— আমিতো তাই চাই।স্যার রেগে যাক।আর তারপর না খাওয়ালে আমি খাওয়াবো।
নিরা —— কিন্তু,,,,,
আফরা —— আর কোন কিন্তু না।তুই খালি দেখ ওকে।
সবাই খুশিতে লাফাচ্ছে।তারপর সবাই আশরাফের কাছে দৌড়ে গিয়ে চিল্লিয়ে বলল ,,,
বাচ্চারা —— ভাইয়া আইসক্রিম খাবো।
আশরাফ সবার চিল্লানো শুনে কিছুটা হচকিয়ে যায়।তারপর বলে,,,,
আশরাফ —— তোমরা?
বাচ্চারা —— ভাইয়া আপনি নাকি আমাদের আইসক্রিম খাওয়াবেন।আমরা আইসক্রিম খাবো।আমাদের আইসক্রিম খাওয়াবেন ভাইয়া।
আশরাফ —— আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তোমাদের আইসক্রিম খাওয়াবো।কিন্তু এই কথাটা তোমাদের কে বললো?হুম,,,,
বাচ্চারা —— ওই আপুটা,,,,
আফরা —— কি হইলো ওরা আমার দিকে ইশারা করলো কেনো?আমার নাম বলে দিলো নাকি আবার,,,,,
তারপর আশরাফ বাচ্চাদের নিয়ে আফরার কাছে আসলো।
আফরা —— এইরে,,,নিশ্চয় এখন বাচ্চাদের সামনে আমাকে স্যার বকবে।
নিরা —— আফরা চল পালাই।
আফরা —— হুম চল,,,,
এটা বলে পালাতে গেলে আশরাফ ডাক দেয় আফরাকে।আফরা ভয়ে ঢোক গিলছে।না জানি এবার সবার সামনে অপমান করে দেয় এটা ভেবে।কিন্তু আশরাফ আফরাকে ডাক দিয়ে বলে,,,
আশরাফ —— ওদের আইসক্রিম খাওয়াচ্ছি তখন তোমরা ও চলো।
আফরা আর নিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।রোদ সবাইকে আইসক্রিম কিনে দিয়ে আফরাকে থ্যাংকস বলল।আফরা আর নিরা আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছে।আশরাফ একটুও রাগলো না।উলটা আফরাকে থ্যাংকস দিয়ে আইসক্রিম খাওয়ালো।আফরা তো ভাবছিলো এতোগুলা বাচ্চা দেখে আশরাফ রেগে যাবে।
আফরা —— আচ্ছা স্যার আমাকে থ্যাংকস দিলেন কেনো?
আশরাফ —— কারন তুমি আমাকে এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত উপহার দিলে তাই।
আফরা —— মানে?
আশরাফ —— মানে হলো আমি কখনো জানতামই না যে এই বাচ্চাদের মাঝে সময় কাটাতে কতোটা ভালো লাগে।ওদের হাসিগুলা সত্যি ভালোলাগে।ওদের আনন্দ দেখে সত্যি নিজের মধ্যে ও এক অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছে।তোমাকে সত্যি অনেক অনেক থ্যাংকস।
আফরা —— ওহ,,,,,
আফরা মনে মনে বলছে ,,,দূর কই ভাবলাম স্যারকে রাগাবো।তা না উলটা খুশি হইলো।
চলবে ………………………………