ভার্সিটির ইংলিশ টিচার যখন স্বামী পর্ব : ০৪

আফরা মনে মনে বলছে ,,,দূর কই ভাবলাম স্যারকে রাগাবো।তা না উলটা খুশি হইলো।তারপর আফরা বাসায় গিয়ে শুনে,,,,,,,

আফরার মা —— আফরা এখনি তোমার জামা-কাপড় আর যা যা লাগে তা সব ব্যাগে গুছিয়ে নাও।

আফরা —— কেনো আম্মু।ব্যাগ গুছাবো কেনো?আমরা কি কোথাও যাবো?

আফরার মা —— হুম, যাবো।এবং কালকে সকালের মধ্যেই রওনা দিবো।

আফরা —— কোথায়?

আফরার মা —— তোমার মামা বাড়িতে।

আফরা —— ওখানে যাবো কেনো আম্মু।তুমিতো জানো আমার মামার বাড়িতে খুব একটা যাওয়া হয়নি।তাহলে আজকে কেনো যাইতে বলছো।

আফরার মা —— কারন এই শুক্রবার এ তোমার মামাতো বোন তিশার বিয়ে।হঠাৎ করেই বিয়ে ঠিক হইছে।তাই আগে জানাতে পারেনি।আর তাই আমাদের কালকেই চলে যেতে হবে।

আফরা —— কিন্তু আম্মু আমার ক্লাস আছে।আর তাছাড়া আমি নিরাকে ছাড়া যাবো না।

আফরার মা —— হ্যা আমি খুব ভালো করে জানি।তুই ওকে ও বলে দিস।

আফরা —— সত্যি আম্মু।নিরাও আমার সাথে যাবে।

আফরার মা —— হুম,,,, যাবে।

আফরা —— ঠিক আছে তাহলে আমি এক্ষুনি নিরাকে খবরটা বলছি।

এটা বলে আফরা নিরাকে ফোন করে।দুইবার ফোন বাজতেই নিরা বলে,,,,

নিরা —— হ্যালো।

আফরা —— ওই কুত্তী।কতোক্ষন ধইরা ফোন দিতাছি ধরিস না কেনো তুই।

নিরা —— আমি ওয়াশরুমে থাকলে ধরমু কেমনে।

আফরা —— আচ্ছা শোন আমি মামা বাড়ি যাচ্ছি।তিশার বিয়ে উপলক্ষে।

নিরা তিশাকে অনেক ভালো করেই চিনে।তিশা এখানে আসলে নিরা আফরা আর তিশা একসাথে অনেক মজা করে ।

নিরা —— ওহ,,,,,

আফরা —— কিরে চুপ করে আছিস কেন?

নিরা —— তুই মামা বাড়ি যাবি আর আমি একা থাকবো এখানে।আমাকে একা একা ক্লাস করতে হবে।স্যারের বকা খাইতে হবে।আর তিশার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।

আফরা —— আরে বলদি তুই ও আমার সাথে যাচ্ছিস।বুঝেছিস।আর তোকে ওই খাম্বার বকাও খাইতে হবে না।বুঝেছিস।

নিরা —— সত্যি।

আফরা —— হুম সত্যি।

নিরা ——- কিন্তু আন্টি কি ভাববে।

আফরা —— আরে আমি আম্মুকে বলছি আম্মু রাজি।এবার তুই খালি তোর বাড়ির সবাইকে রাজি করা।

নিরা —— ও নিয়ে তুই টেনশন করিস না।আমি ঠিক রাজি করামু।

আফরা —— আচ্ছা। কালকে সকালে বাসায় চলে আসিস।

নিরা —— হুম,,,,আমিতো ভোরেই চইলা যামু।তুই একদম চিন্তা করিসনা।বাই,,,,

আফরা ——- হুম,,,,,ঘুমা,,,,,

অন্যদিকে আশরাফ বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে খেতে আসলে আশরাফের বাবা মা দুইজনই বসে।এবং আশরাফের ছোটোবোন আশফিয়াকে এবং আশরাফকে বলে,,,,

আশরাফের বাবা —— আশরাফ সব কিছু গুছিয়ে রেডি থেকো।আমরা সকলে তোমার ফুফুর বাসায় যাবো।

আশরাফ —— ফুফুর বাসায় কেনো বাবা?

আশরাফের বাবা —— তিশার বিয়ে তাই।

তিশা আশরাফের ফুফাতো বোন হয়।

আশফিয়া —— সত্যি বাবা তিশা আপুর বিয়ে আমি এক্ষুনি গিয়ে সব গুছিয়ে নিচ্ছি।

আশরাফ —— কিইই,,,,এতো তাড়াতাড়ি তিশার বিয়ে কেনো বাবা।

আশরাফের বাবা —— পাত্রপক্ষ বিয়েতে দেরি করতে চায়নি।তাই তাড়াতাড়ি বিয়েটা হচ্ছে।

আশরাফ —— ওহ,,,,কিন্তু বাবা আমি যেতে পারবো না।

আশরাফের বাবা —— কেনো যেতে পারবে না তুমি?

আশরাফ —— বাবা তুমিতো জানো আমি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি।এখনই কিভাবে ছুটি নিবো বলো।

আশরাফের বাবা —— সেসব আমি জানি না।তবে তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে এটাই ফাইনাল।

এটা বলে আশরাফের বাবা উঠে চলে যায়।তারপর আশরাফ ও খেয়ে চলে যায়।আশফিয়া তো খুব খুশি।কিছুদিন পড়া থেকে বিশ্রাম নেওয়া যাবে।আর আশরাফ খুশি অন্তত কয়েকটাদিন সে আফরা নামক ঝামেলা থেকে বাঁঁচবে।সকালে নিরা আফরার বাসায় এসে পড়ে।আফরা তখন গভীর ঘুমে। নিরা কলিংবেল বাজাতেই আফরার আম্মু এসে দরজা খুলে দেয়।

নিরা —— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।কেমন আছেন?

আফরার মা —— ওয়ালাইকুম আসসালাম।আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?

নিরা —— আন্টি আমিও অনেক ভালো আছি।

তারপর নিরা আরো অনেক কিছু বলে আফরার আব্বু-আম্মুর সাথে।

নিরা —— আংকেল আফরা কই?

আফরার বাবা —— সে তো ঘুমেই কাত।কতোক্ষন ধরে আমি আর তোমার আন্টি ডাকছি।কিন্তু ও তো উঠতেই চাইছেনা।আমরা রেডি হয়ে বসে আছি আর ও এখনো উঠছেই না।তুমি যাও তো মা দেখো উঠাতে পারো কিনা।

নিরা —— ওকে আংকেল,,,,,

নিরা এসে দেখে আফরা উপুর হয়ে টেডিবিয়ার জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।

নিরা —— আহ্,,,,,,,, কি শান্তির ঘুম।আর কিছুই খবর নাই তার।ওই হারামি উঠ। বেড়াইতে যাবি না।কিরে উঠ তাড়াতাড়ি।

আফরা —— কেরে? নিরা নিরা লাগছে গলাটা।কিন্তু নিরা হবে কেমনে।আমিতো আমার রুমে।

নিরা —— হ,,,,,তুই তোর রুমেই আছিস।আর আমিও তোর রুমেই আছি।এবার একটু উঠ না তাড়াতাড়ি। রেডি হবি কবে।আর তোর মামা বাড়ি যাবি কবে হ্যা।

আফরা —— মামা বাড়ি কেনো যাবো?

নিরা —— তোর বিয়া খাইতে,,,,,,।তিশার বিয়েতে যাবি না তুই।

আফরা —— ওহ্ হে।আমার মনেই নেই।তুই পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর আমি রেডি হয়ে আসছি।

এটা বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আফরা, তার আব্বু-আম্মু এবং নিরা রওনা দেই।প্রায়ই তিন ঘন্টা পর পোঁছাই। গিয়ে দেখে পুরোবাড়ি সাজানো।অনেক সুন্দর করে ডেকোরেশন করা।গাড়ি থেকে নেমেই দেখে আফরার মামা আর মামি আগে থেকে দাঁড়িয়ে ছিলো।আফরারা যাওয়ার পর তাদের সাথে কথা বলে তাদের থাকার রুম দেখিয়ে দেয়।আফরা আর নিরা একসাথে তিশার রুমেই থাকবে।তিশা ওদেরকে দেখে খুশিতে পারছেনা নাচতে।তারা তিনজনই ভিষন খুশি।এদিকে আশরাফরাও রওনা দিয়ে দেয়।এখানে পৌছে আশরাফের পরিবার তিশার বাবা-মায়ের সাথে কিছু কথা বলে নেয়।আশরাফকে তিয়াশ এর রুমে থাকতে দেওয়া হয়।তিয়াশ আশরাফের ফুফাতো ভাই ও তিশার বড় ভাই পরেরদিন তিশার গায়ে হলুদ।

জার্নি করে আসায় তাই সকলেই বিশ্রাম নিয়ে নেই।গায়ে হলুদের দিন আফরা আর নিরা তিশাকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেই।তারপর নিরা আর আফরাও সাজতে শুরু করে দেই।সবাই শাড়ি পরেছে।আফরা গোলাপি পাড় হলুদ শাড়ি পরেছে।চুলগুলো খোপা করে ফুল দিয়ে সুন্দর করে সেজেছে।চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, দুই হাতে দুই মুঠো চুড়ি, কানের দুল আর ছোট একটা টিপ।নিরা আর তিশা আগেই নিচে চলে গেছে।আর আফরা তখনও রেডি হচ্ছিলো।তাই আফরা ওদের সাথে যেতে পারেনি।আজকে আশরাফ, তিয়াশ আরো সকল ছেলেরা ম্যাচিং করে হলুদ পাঞ্জাবি পরেছে।সবাইকে খুব সুন্দর লাগছে।আফরা নিচের দিকে তাকিয়ে শাড়ির কুচি ঠিক করতে করতে দরজার সামনে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা খাই।

আফরা —— কেরে,,,,,কোন খাটাশরে,,,,, আমারে ধাক্কা দিলি?

এটা বলে উপরে তাকিয়ে আফরা হা হয়ে যাই।তারপর উপরে তাকাতেই দেখে আশরাফ আফরার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।তিয়াশ আর তিশার রুম একেবারে সামনাসামনি তাই বের হতেই ধাক্কা লেগে যায়।

আফরা —— আপনি এখানেও,,,,

আশরাফ —— তুমি,,,,, তুমি এখানে কি করো?

আফরা —— আমি এখানে কি করি মানে? আপনি সবসময় আমার পিছনে পইড়া আছেন আবার বলেন আমি এখানে কি করি।তাছাড়া আপনার কি আমায় ধাক্কা না দিলে শান্তি লাগে না।সবসময় আপনি আমার পিছন পিছন থাকেন কেনো বলেনতো?

আশরাফ —— আমি তোমায় ধাক্কা দেইনি।বরং তুমি আমায় ধাক্কা দিয়েছো।

আফরা —— মোটেই না।আপনিই আমায় ধাক্কা দিয়েছেন।এখন আবার আপনি মিথ্যা বলছেন?

আশরাফ —— নিচের দিকে তাকিয়ে কে হাটছিলো শুনি? আমি না তুমি?হ্যা,,,,

আফরা —— সেটা আমি কিভাবে বলবো। আপনিই ভালো যানেন।কিন্তু আমি একদম শিওর আপনি আমায় ইচ্ছা করে ধাক্কাটা দিছেন।

আশরাফ —— কিইইই আমি তোমাকে ইচ্ছা করে ধাক্কা দিছি।

আফরা —— তা নয়তো কি হ্যা।বাই দ্যা ওয়ে আপনি এখানে কি করেন বলেনতো।আপনি এখানেও আমার পিছন পিছন চলে আসছেন।আমি যেখানেই যাই আপনি ঠিক সেখানেই আমার পিছন পিছন চলে আসেন কেমনে হ্যা?

আশরাফ —— এক্সকিউজমি,,,,আমি আমার ফুফুর বাড়ি আসছি।তোমার পিছন পিছন না।ওকে।বরং তুমি আমার পিছনে পিছনে আসছো।

আফরা —— একদমই না।আমি ও আমার মামার বাড়ি আসছি।তিশার বিয়ের জন্য।দূর কই ভাবলাম কয়টাদিন আমি একটু আরামে থাকবো না আবার সেই আপনি,,,,,, অসহ্য।

আশরাফ —— শোনো আমিও না তোমার মতো পেত্নীর থেকে বাচার জন্য এখানে আসছিলাম কিন্তু পেত্নী কি আর সহজে ঘাড় থেকে নামে,,,,পেত্নী ঠিক সামনে হাজির,,,,

আফরা —— কিহ্,,,,আমি পেত্নী?আমাকে আপনি পেত্নী বলতে পারলেন?আমাকে আপনার কোন দিক দিয়ে পেত্নী মনে হয় হ্যা।

আশরাফ —— সব দিক দিয়েই তোমায় পেত্নী লাগে।

আফরা —— আমি পেত্নী হইলে আপনি বান্দর, ইদুর,বিলাই,টিকটিকি আরো যা যা আছে সব।

আশরাফ —— তুমি,,,,,,,,,,

তিয়াশ —— আরে তোমরা এখানে কি করো?তাড়াতাড়ি চলো নিচে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবেতো। ভাই চল।আফরা তোমাকে আজকে অনেক সুন্দর লাগছে।একদম হলুদ পরী লাগছে।

আফরা —— থ্যাংক ইউ।তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে তিয়াশ।

তিয়াশ —— তোমাকেও থ্যাংকস।

আর এদিকে আশরাফ তো রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে।

আশরাফ —— তিয়াশ তুই না বললি অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।তাহলে এখন লেট করছিস কেনো? চল আমরা নিচে যাই।

তিয়াশ —— তুই যা।আমি আফরাকে নিয়ে আসছি। আফরা চলো।

আফরা —— হুম,,,,,,

তারপর আফরা আর তিয়াশ একসাথে চলে যাই।তিয়াশ আফরাকে ছোট থেকে পচ্ছন্দ করে।সেটা আফরা বুঝে ও না বুঝে থাকে।আর আশরাফ তো আফরাকে আর তিয়াশকে একসাথে দেখে জ্বলছে আর ফুলছে।

আশরাফ —— এহ্,,,,,কি ভাব দুইজনের।তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে তিয়াশ।আমার সংগে সাড়াদিন ঝগড়া করবে আর সবার সাথে মিষ্টি করে কথা বলবে।আমাকে ও তো সুন্দর লাগছে কই আমাকে তো বললো না একবারো।আবার দুইজন একসাথে গেলো।আমি ও যে ছিলাম কারো চোখেই পড়লো না।আচ্ছা,,,,আমি এতো রেগে যাচ্ছি কেনো?যার যা ইচ্ছা সে তাই করুক।তাতে আমার কি আমি আমার মতো করেই থাকবো।

তারপর আশরাফ ও নিচে চলে যায়।নিচে গিয়ে দেখে আফরা,তিয়াশ, নিরা,আশফিয়া সবাই একসাথে গল্প করতেছে তাই কোনো দিকে কোন খেয়াল নেই।আশরাফ দূর থেকে সব দেখছে কিন্তু এমনভাব দেখতেছে যেন ফোন টিপতেছে বলে মনে হয়।হঠাৎ আফরার চোখ যায় আশরাফের দিকে।হলুদ পাঞ্জাবি, চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করা, হাতে ঘড়ি আর এমন ভাব করছে যেন মোবাইলের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সব মিলিয়ে দেখতে অসাধারণ লাগছে।আফরা এই প্রথম আশরাফকে একটু ভালো করে দেখলো।এতোদিনতো শুধু ঝগড়াই করে গেছে।আশরাফকে তেমন ভাবে দেখেনি।আজকে দেখে সত্যি মনে হচ্ছে আসলেই সুন্দর আশরাফ।শুধু সুন্দর না একটু বেশিই সুন্দর।

চলবে ………………………………

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *