বড় লোকের মেয়ে যখন হুজুর ছেলের প্রেমে শেষ পর্ব

আমিঃ ওকে ঘুমা, তারপর আমরা শুয়ে পড়লাম,কিন্তু আমার ঘুম আসে না, শুধু তানজিলার কথা মনে পড়ে তাই ভাবলাম একটু facebook এ লগইন করি হয় তো তানজিলাকে একটু ভুলে থাকতে পারবো, যেই ভাবা সেই কাজ facebook লগইন করলাম লগইন করা মাত্রই যা দেখলাম তার জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলাম না,,

আমি ফেসবুকে ডুকেই দেখি!! হুমায়রার আইডির সাথে আর আমার আইডির মেরিড স্ট্যাটাস দেওয়া,, এবং আমি যখন বিয়ের আসরে ছিলাম তখন কার কয়েক টা পিক দিয়ে একটা স্ট্যাটাস দেওয়া,, স্ট্যাটাস টা এমন ছিল আজ পূর্ন হলো আমার হাজার দিনের স্বপ্ন !! আজ এক হলো দুই পবিত্র মনের আজ পেয়ে গেলাম আমার মনে যত্ন করে রাখা সেই মানুষ টাকে যাকে পাওয়ার জন্য কত রাত না ঘুমে কাটানো যাকে পাওয়ার জন্য প্রতি রাত আল্লাহর দরবারে শত বার হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা আজ আমি অনেক খুশি যে খুশি টা শত সুখের অনুভব করি নি,, আজ আমি অনেক আনন্দিত আজ আমার মনের মানুষ টিকে কাছে পেলাম!!! ইতিঃ হুমায়রা আক্তার!!

আমিঃ আমি ওর স্ট্যাটাস টা দেখে একদম হা হয়ে রইলাম ও আমাকে এত ভালোবাসে?? কিন্তু কখনো তো আমাকে বলে নি! না আমি তানজিলার মিথ্যে ভালোবাসার জন্য ওকে কষ্ট দিতে পারবো না, আমি কষ্ট পাবো কিন্তু ওকে দিবো না এসব ভাবতেছি তখন মেসেঞ্জারে মেসেজ আসার আওয়াজ পেলাম মেসেঞ্জারে sms টির দিকে তাকিয়ে দেখি হুমায়রার sms,,,

হুমায়রাঃ করেছি যতন তোমায় এই বুকের খাচায়,,

       বেসেছি ভালো তোমায় আমার মন উজার করে!

        রাখবো তোমায় বেধে আমি মনের পিঞ্জরায়!

দিবে কি তুমি আমায় তোমার বুকে ঘুমানোর অধিকার?

        আমি তো হলাম সেই তোমার প্রেমের কাঙ্গাল!

ইতিঃ তোমায় পাগলের মত ভালোবাসার মানুষ হুমায়রা,

(কবিতাটি আমার নিজের লেখা একটু বলবেন কি কেমন হলো কবিতা টি)

আমিঃ আমিতো আবার অবাক হলাম ওর sms দেখে,, (কিছু বলছি না শুধু এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ফোনের দিকে)

হুমায়রাঃ কি হল কথা বলছো না কেন??

আমিঃ আপনি আমাকে এত ভালোবাসেন?? কখনো বলেন নি তো!

হুমায়রাঃ হুম তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি গো,, নিজের থেকেও বেশি!!

আমিঃ তাহলে আপনি আমাকে বলেন নি কেন?

হুমায়রাঃ বলবো বলবো বলে আর বলা হয় নি!!

আমিঃ যদি আপনি আমাকে হারিয়ে ফেলতেন??

হুমায়রাঃ তাহলে আমি নিজেকেই শেষ করে দিতাম!!

আমিঃ থাক আপনার আর নিজেকে শেষ করতে হবে না!! আপনি পেয়ে গেছেন আপনার ভালোবাসার মানুষ টি কে কিন্তু আমি হারিয়ে ফেলেছি আমার মনের ভিতর যত্ন করে রাখা মানুষ টিকে!!

হুমায়রাঃ তোমার মনে যত্ন করে রাখা মানুষ টি মানে??

আমিঃ তাহলে শুনুন!! (বলে ওকে সব খুলে বললাম,,)

হুমায়রাঃ 😁😂😀😂

আমিঃ এই আপনি হাসছেন কেন??

হুমায়রাঃ তুমি কেমন পুরুষ?? পুরুষ হয়েও নিজের মনের মানুষ কে হারিয়ে ফেলেছো?? আর আমি মেয়ে হয়েও আমার মনের মানুষ কে পেয়েছি!!

আমিঃ ও তো আমাকে ভালোবাসে নি, আর আমি আমার পরিবারের কথা আমি অবশ্যই রাখবো!!!

হুমায়রাঃ আচ্ছা অনেক রাত হইছে এখন ঘুমাও, কালকে আর তোমাকে ঘুমাতে দিবো না!!

আমিঃ আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ (বলে ফেসবুক থেকে বের হয়ে গেলাম! বের হয়ে শুয়ে পড়লাম কখন যে ঘুমিয়ে গেছি জানি না সকালে ফজরের আজান শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো,, ঘুম থেকে উঠে দেখি হারামি দুইটা এখনো নাক ডেকেঘুমায়,, দুইটারে টেনে ঘুম থেকে উঠিয়ে বাসা থেকে অজু করে তিন জনে মসজিদে চলে গেলাম!! তারপর নামাজ পড়ে তিন জন একটু ঘোরাঘুরি করে বাসায় চলে আসলাম,, বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম রাতে তেমন ঘুম হয় নি তাই!! হঠাৎ আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙলো!! )

আম্মুঃ এই ইমন উঠ আর কত ঘুমাবি??

আমিঃ কি হল আম্মু ডাকছো কেন আরেক টু ঘুমাই না!!

আম্মুঃ না জনাব আপনার আর ঘুমাতে হবে না এখন উঠেন,, উঠে তারাতারি গোসল করে আসেন একটু পর বউ মাকে আনতে যাবে!!

আমিঃ আরেকটু ঘুমাই না প্লিজ!!

আম্মুঃ না না উঠ তারাতারি!! (তারপর আম্মু টেনে আমাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে ওয়াস রুমে পাঠিয়ে দিলো,, তারপর গোসল করে ওয়াস রুম থেকে বের হয়ে দেখি হারামি দুইটা দাড়িয়ে!!)

রোহানঃ কি জনাব আজ ভাবি ঘুমাতে দিবে না তাই এখনি ঘুমিয়ে নিচ্ছেন??

আমিঃ একটা লাথি দিমু ফুট এখান থেকে!!

রোহানঃ যাচ্ছি যাচ্ছি,, তার আগে তারাতারি রেডি হয়ে বাহিরে আয় সবাই তোর জন্য দাড়িয়ে আছে!!

আমিঃ আচ্ছা যা আসছি আমি!! (হারামি দুইটা চলে গেল তারপর আমিও রেডি হয়ে বাহিরে চলে গেলাম গিয়ে দেখি একটা প্রাইভেট কার অনেক সুন্দর করে সাজানো আর ওটার পিছনে ৪/৫ টা মাইক্রো!! আমাকে দুই হারামি সাজানো প্রাইভেট কারের পিছনের সিটে বসালো আমার ডান পাশে রোহান আর বাম পাশে বেলাল বসলো আর সামনে ড্রাইভারের পাশে আমার ভাইয়া বসলো!! আর বাকি আত্মীয় স্বজনরা বাকি গাড়িতে বসলো তারপর গাড়ি তার আপন গতিতে চলতে লাগলো,, কিছুক্ষন পর আমরা চলে আসলাম বিয়ে বাড়ি তারপর সেখান থেকে খেয়ে দেয়ে হুমায়রা কে নিয়ে আসতে আসতে রাত ১০:০০ বেজে গেলো ওকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আপু আর আমার কাজিনরা আলাদা একটা রুমে নিয়ে গেল আর তখন নতুন বউ দেখার জন্য ওর রুমে মহিলাদের অভাব নেই আর আপুর বান্ধুবিরা আমার রুমে আমাদের বাসর সাজাইতেছে!!)

এ দিকে আমার একা একা অনেক বোরিং লাগতেছে আর হারামি দুইটাকে ও দেখছি না তাই আমি ভাবলাম একটু ছাদে যাই যেই ভাবা সেই কাজ চলে গেলাম! ছাদে গিয়ে একটা কোনায় দাড়িয়ে আছি তখনি তানজিলার কথা মনে পড়ে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেল এভাবে কখন যে রাত ১২:০০ বেজে গেলো জানি না আমি ছাদের ঐ কোনায় এখনো দাড়িয়ে আছি হঠাৎ ছাদে বিভিন্ন রকমের আলো জ্বলে উঠলো আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি আপু, দুলাভাই, আম্মু, আব্বু, ভাইয়া, ভাবি আর আমার পিচ্ছি আম্মু টা, আর বাকি আত্মীয় স্বজনরা পিছনে দাড়িয়ে আছে, আমি পিছনে তাকানো মাত্রই সবাই এক সাথে HAPPY BIRTHDAY TO YOU Dear Emon,, (আমি তো সবাইকে এভাবে দেখে একদম হাবলা হয়ে গেলাম আজ আমার যে জন্ম দিন ওটাই তো ভুলে গেছি)

আব্বু আম্মুঃ কিরে বাবা অবাক হলি সারপ্রাইজ টা কেমন হলো?

আমিঃ এত কিছু কখন করলা? আর কে করছে??

আব্বুঃ এগুলা রোহান আর বেলাল করছে!! (আমি হারামি দুইটার দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে,, আমি এক দৌড়ে আব্বু আম্মুকে জড়ীয়ে ধরে কেদে দিলাম আসলে ভাই এটা দুঃখের কাদা নয় এটা হলো সুখের কাদা)

আব্বু আম্মুঃ এই পাগলা কাদিস কেন?

আমিঃ………………(একদম চুপ হয়ে কাদতেই আছি)

আব্বু আম্মুঃ হইছে আর কাদতে হবে না তোর জন্য একটা স্পেশাল সারপ্রাইজ আছে একটু পড়ে পেয়ে যাবি এখন রুমে যা অনেক রাত হইছে বউ মা একা একা বসে আছে!!

আমিঃ আচ্ছা!

আব্বুঃ রোহান আর বেলাল তোমরা ইমন কে রুমে নিয়ে যাও!

হারামি দুইটায়ঃ আচ্ছা আংকেল (বলেই এক দৌড়ে আমার কাছে এসেই!!) দুলাভাই চলেন!

আমিঃ শালা আমি কোন দিক দিয়ে তোদের দুলাভাই? (ঘুতা দিয়ে)

হারামি দুইটায়ঃ ভাবির দিক দিয়ে,, (কানে কানে)

আমিঃ শালা লাথি দিমু একটা, (আস্তে)

রোহানঃ আচ্ছা মারিস এখন চল,, আর শোন বিড়াল টা কিন্তু মারবি!

আমিঃ এই বার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে,,, একটা উষ্টা মারমু! একদম মেঘলার কোলে গিয়ে পড়বি!!

রোহানঃ তোমার মারতে হবে না মামা আমি এমনেই পড়বো, কিছুদিন পর!

আমিঃ মেঘলা কোথায়?

রোহানঃ ছাদেই তো দেখলাম!”

আমিঃ ও আচ্ছা,, (কথা বলতে বলতে রুমের সামনে চলে আসলাম, এবার

হারামি দুইটায়ঃ মামা বিড়াল টা কিন্তু ঠিক মারবি!” (জোরে)

আমিঃ তবে রে (বলার সাথে সাথে হারামি দুইটা এক দৌড়ে বাহিরে চলে গেল আর আমি রুমে ডুকে দেখি হুমায়রা বিছানার মাঝ খানে বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে!! আমি কাছে যেতেই ও বিছানা থেকে নেমে এসে পা ধরে সালাম করতে যাবে তখন ই ওকে ধরে,,)

আমিঃ আরে আরে কি করছেন??

হুমায়রাঃ কেন বউ বর কে যা করে আমি তাই করছি!” ( ওর কন্ঠ টা আমার কেন জানি চেনা চেনা লাগছে!)

আমিঃ আরে পা ধরতে হবে না আপনি আমার পায়ে থাকবেন না বুকে থাকবেন!

হুমায়রাঃ সত্যি? (বলেই আমাকে জড়ঘয়ে ধরলেন)

আমিঃ হুম, আপনি আমার বুকে থাকবেন!! (এখনো ওর মুখ থেকে ঘোমটা সরায় নি তারপর ও বিছানায় গিয়ে আবার বসলো আমি গিয়ে ওর ঘোমটা সরাতেই!)

আমিঃ আআআপনি? (একদম অবাক হয়ে,, আমি সামনে তাকিয়ে দেখি তানজিলা বউ সেজে বসে আছে)

তানজিলাঃ হুম আমি, কেন অন্য কেও কি থাকার কথা ছিল?? (ব্রু কুচকে)

আমিঃ আপনার তো বিয়ে হয়ে গেছে আর এখানে তো হুমায়রা থাকার কথা!!

তানজিলাঃ আরে গাধা আমি ই হুমায়রা!

আমিঃ মানে???

তানজিলাঃ মানে হল আমার নাম ই হুমায়রা,, পুরো নাম হলো হুমায়রা আক্তার তানজিলা,,

আমিঃ তাহলে যে আপনার বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো ঐ ছেলেটার সাথে??

তানজিলাঃ না ও হলো আমার কাজিন ।

আমিঃ তাহলে এত দিন আমার সাথে এমন করলেন কেন??

তানজিলাঃ আগে দুইরাকাত নামাজ পড়ে নেও তার পর বলছি,, (নামাজ শেষ করে,,)

আমিঃ এখন বলেন কি হচ্ছে এসব?

তানজিলাঃ তাহলে পুরো ঘটনা টা শুনো ঐ দিন যে দিন আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য তোমার আর আমার বিয়ের কার্ড দিলাম খুলে দেখার জন্য তখন তুমি খুলে দেখ নি তাই আমার প্রচন্ড রাগ হয় তোমার উপর তাই এমন করছি,, শপিং এর দিন যখন তোমাকে তোমার পিক দেখাতে গেলাম তখন তুমি পিক না দেখে চলে যেতে লাগলে তখন ও আমার প্রচন্ড রাগ হয় তাই আমি আমার কাজিন এর পিক দেখাই,, তারপর আবার যখন বলতে যাবো তখন জানলাম আমাদের বিয়ের দিন তোমার জন্ম দিন তাই আর বললাম না ভাবলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো তাই এমন টা করা,,

আমিঃ তাহলে ঐ দিন আম্মু আমাকে এত টা অপমান কেন করলো??

তানজিলাঃ আমি আম্মু কে বলে দিছি যাতে তুমি না জানো!!

আমিঃ তাহলে ফেসবুকে তুমিই আমার সাথে কথা বলছো?

তানজিলাঃ হুম, আমি ফেসবুকে তোমাকে পরিক্ষা করছি,

আমিঃ তো আমি কি জয় হইছি নাকি পরাজয়?

তানজিলাঃ জয় হইছো,,

আমিঃ তাহলে তুমি ই আমার আব্বুর বন্ধু হাম্মাদ চৌধুরীর মেয়ে??

তানজিলাঃ হুম,,

আমিঃ আর বললে না যে ছোট থেকেই তোমার সাথে আমি কি যেন করছি??

তানজিলাঃ হুম সেটা হলো, ছোট থেকেই তোমার আর আমার বিয়ে ঠিক করা, আর যেটা করছো ওটা হলো আংটি পড়িয়ে রাখছো!!

আমিঃ ও আল্লাহ রে এত কিছু হয়ে গেল আমি জানি না!!

তানজিলাঃ হু তো স্যার আপনার বার্থডে সারপ্রাইজটি কেমন হলো??

আমিঃ হুম দারুন,,

তানজিলাঃ চলো না এখন একটু ছাদে গিয়ে গল্প করি,,

আমিঃ আচ্ছা চলো,, (বলে ছাদে চলে গেলাম গিয়ে এক কোনায় আমার দুজন দাড়িয়ে আছি!! আজ মনে হয় আমার চোখ নিজেই অনেক খুশি”” তানজিলা আমার কাদে মাথা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে)!

তানজিলাঃ বলো তো আজকের চাদ টি কেমন??

আমিঃ সুন্দর তবে আমার কাছে তেমন সুন্দর না!!

তানজিলাঃ কেন কেন?? (আমার দিকে তাকিয়ে)

আমিঃ কারন আমার কাছে যে চাদ টি আছে ওটা আসমানের চাদের থেকেও সুন্দর!

তানজিলাঃ সত্যি?? (আমাকে জড়ীয়ে ধরে)

আমিঃ হুম (ওর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে)

তানজিলাঃ শুনো না!!

আমিঃ হুম বলো!

তানজিলাঃ আমার………

আমিঃ আমার কি??

তানজিলাঃ আমার না তোমার মত একটা বেবী লাগবে,, (বলেই আমার বুকে মাথা লুকালো)

আমিঃ তাই?? আচ্ছা ok।

                <<সমাপ্ত>>

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *