জান্নাত হাসে আমার কথা শুনে।তার খুব ভালো লাগে আমার কথা শুনতে।আসলে শুধু কথা না আমার সবকিছুই তার অনেক ভালো লাগে।জান্নাত আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো…..
জান্নাতঃএবার আপনার প্রাক্তন সম্পর্কে বলুন।তার কাছে এভাবে বললেন কেন আমরা বিবাহিত?
আমিঃআসলে ওকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।টানা চারটা বছর আমরা একসাথে সম্পর্কে ছিলাম।তখন আমার আর্থিক অবস্থার খুব খারাপ ছিলো।ফারিয়া বড় লোকের একটা ছেলে পেয়ে আমাদের চার বছরের সম্পর্ককে নিমিষেই শেষ করে ওই ছেলের কাছে চলে যায়।সেদিন খুব কষ্ট পাই।কিন্তু সিদ্ধান্ত নেই যে অনেক টাকা কামাবো জীবনে।দেখো আজ আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার।টাকার কোনো অভাব আমার নেই আল্লাহর ইচ্ছায়।অভাব শুধু একটা মনের মানুষের।যে সারাটা জীবন আমার পাশে থাকবে আমার হাত ধরে৷যার মাঝে আমি ডুবে থাকবো শেষ দিনটা পর্যন্ত।
শেষের কথাগুলো আমি জান্নাতকে উদ্দেশ্য করেই বললাম।জান্নাত আমার কথা শুনে চুপচাপ বসে রইলো।আমি আবার বললাম…..
আমিঃফারিয়া যখন তোমাকে আমার পাশে দেখলো তার মুখটা সম্পূর্ণ অন্ধকার হয়ে যায়।কারন সে কখনোই চায়নি আমি ভালো থাকি।তোমার মতো মিষ্টি একটা বউ পেয়েছি দেখে দেখোনি ওর মুখটা কেমন মলিন হয়ে গিয়েছে।ও যে ভালো নেই তা ওর মুখের ছাপেই স্পষ্ট।তাই ওকে আরও কষ্ট দিতেই তোমাকে আমার স্ত্রী বলেছি।তুমি কি মাইন্ড করেছো তার জন্য?
জান্নাতঃনা না একদম না৷একটুও মাইন্ড করিনি।শুধু একটু অবাক হয়েছি।মনে হচ্ছিলো কোনো সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম।হাহা।
আমি জান্নাতের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকি।আজ আর নিজেকে আটকাতে ইচ্ছা করছে না।আমি উঠে ঠিক জান্নাতের সামনে গিয়ে বসলাম।ও আবার অবাক হলো।আমি ওর হাত দুটো সুন্দর করে আমার দুহাতের মধ্যে নিলাম।জান্নাত আর আমি এখন একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।আমি ধীর কণ্ঠে জান্নাতকে বললাম…..
আমিঃফারিয়াকে যে মিথ্যাটা বলেছি সেই মিথ্যাকে যদি সত্যি করে ফেলি তুমি কি আমাকে বাঁধা দিবে জান্নাত?
জান্নাত বিচলিত হয়ে বলে…..
জান্নাতঃঠিক বুঝতে পারছি না কি বললেন আপনি?কোন মিথ্যা?
আমিঃএই যে তুমি আমার স্ত্রী না হয়েও তোমাকে আমি আমার স্ত্রী বলেছি।এই মিথ্যাটাকে আমি সত্যি করতে চাই।
জান্নাত এবার সব বুঝে যায়।ও পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।তাও কোনোরকম নিজেকে সামলে আমাকে জিজ্ঞেস করে…..
জান্নাতঃআপনি আমাকে বিয়ে করতে চান?আমাকে!!
আমিঃহ্যাঁ তোমাকে,শুধু তোমাকে।কারন আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।আমি চাই তুমি তোমার বাকি জীবনটা আমার নামে করে দেও।আমি তোমাকে আমার পাশে পেতে চাই।আমাদের এই সম্পর্কটাকে আমি একটা পবিত্র নাম দিতে চাই।জান্নাত আমি তোমাকে ভালবাসি।আমি তোমাকে বিয়ে করে আমার স্ত্রী বানাতে চাই।কাউকে ভালবাসার জন্য সহস্র সময়ের প্রয়োজন হয়না।আমার কাছে এক মুহূর্তই যথেষ্ট কাউকে ভালবাসার জন্য।
জান্নাত ভীষন অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর আমার কথা বিশ্বাসই হচ্ছে না৷ও কি কোনো স্বপ্ন দেখছে?জান্নাত চায় না এই স্বপ্ন ভেঙে যাক।জান্নাতও মনে মনে আমাকে চায়৷ কিন্তু?জান্নাত মাথা নিচু করে বলে…..
জান্নাতঃনা না।এটা হয়না৷আমার কোনো পরিবারই নেই।আপনার মা কখনো এমন পরিবারহীন মেয়ের সাথে আপনাকে বিয়ে দিবে না৷সমাজে আপনাদের অনেক নাম দাম আছে।সবকিছু শেষ হয়ে যাবে আমার জন্য।নাহ রাশেদ সাহেব এটা হয়না।এতো সুন্দর একটা স্বপ্ন কখনোই পূরন হওয়ার নয়।কখনো না…..(জান্নাত অঝোরে কেঁদে দেয়)
আমি জান্নাতকে আমার বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলি…..
আমিঃআমি দরকার হলে মায়ের পা ধরে তার কাছে তোমাকে চাইবো।মা না করতে পারবে না।আর রইলো সমাজ!আমি তো সমাজকে বিয়ে করবো না আমি তোমাকে বিয়ে করবো।সমাজ কোনোদিন আমাদের পাশে থাকে না এবং থাকবেও না।সমাজ তাদের জন্য যারা সমাজের ভয়ে নিজের ইচ্ছা ভালবাসা সবকিছুকে ত্যাগ করে।আমার এমন সমাজ দরকার নেই যেখানে অন্যরা কি ভাববে তার জন্য আমি আমার ভালবাসার মানুষকে ছেড়ে দিবো।তোমার কোনো পরিবার লাগবে না।আজ থেকে আমিই তোমার সব।তোমার দুনিয়ায় আমি ছাড়া আর কেউ থাকবে না৷আমি তোমাকে আমার থেকে দূর করতে পারবো না।তুমি আমার জীবনের প্রথম ভালবাসার স্পর্শ।আমি দ্বিতীয় কোনো নারীকে আর কখনো স্পর্শ করতে পারবো না।আমার দ্বারা তা সম্ভব হবে না৷তুমি আমার এই বুকে থেকে যাও,আমি তোমাকে নিয়ে সারাটা জীবন পাড় করে দিবো।কখনো তীল পরিমাণ কষ্ট তোমাকে ছুতে দিবো না,কথা দিলাম।আমি তোমাকে স্পর্শ করে যে শান্তি পাই সে শান্তি আমি আর কোথাও পাইনা।আমাদের এই অবাধ্য মেলামেশাকে পবিত্র একটা বন্ধনে নিয়ে আসি চলো।তাহলে মহান আল্লাহ তায়ালাও খুশি হবেন।
জান্নাতও এবার আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করতে করতে বলে…..
জান্নাতঃআমিও আপনাকে ভালবেসে ফেলেছি।আমিও আপনাকে চাই।আমারও আর কাউকে ভালো লাগে না,বিশ্বাস হয় না আপনি ছাড়া। আমারও শুধু আপনাকেই চাই।কিন্তু আপনার মা যদি আমাকে মেনে না নেয় তখন কি করবেন?
আমি জান্নাতকে সামনে এনে বললাম…..
আমিঃআমি আমার জান প্রাণ সব লাগিয়ে মাকে বুঝিয়ে বলবো।সে সব শুনে বুঝে যদি বলে তুমি আমার জন্য না,তাহলে আমি নিজ হাতে তোমাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে আসবো।কারন মায়ের মনে আঘাত করে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে গেলে হয়তো সাময়িক ভালো থাকবো আমরা কিন্তু বেশিদিন এই ভালো থাকা হবে না।আমার মা তো আমার খারাপ চায় না৷তার মনে আঘাত করলে আমরা কখনো সুখী হতে পারবো না।বাবা-মার দোয়া সবচেয়ে বড় দোয়া।তবে আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো যাতে মা রাজি হয়।
জান্নাতঃএকদম ঠিক বলেছেন আপনি।যে মা আপনাকে এতো কষ্ট করে বড় করলো এখন বিয়ের মতো একটা বড় সিদ্ধান্ত আপনি একা নিতে পারেন না।আমি আপনার কথায় একমত।আন্টি যদি রাজি না হয় আমি চুপচাপ চলে যাবো।আমি সত্যি বলছি আমি খুব খুশি।কারন আপনার মতো কাউকে আমি একবার হলেও জীবনে পেয়েছি।কিছু সময় পাড় করেছি।আমার আর কোনো চাওয়া পাওয়া নেই এই জীবনে।শুধু একটাই ইচ্ছা,আপনি যদি আমার হতেন।
আমিঃআমি মাকে ফোন দিয়ে বলছি সে যেনো কালই চলে আসে।আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।
জান্নাতঃঠিক আছে।চলুন না একটু ওদিকটায় একসাথে পাশাপাশি হাঁটি।যদি কালকে আমার শেষ দিন হয় আপনার সাথে।তাহলে তো আর কোনোদিন আপনাকে পাবো না।
আমিঃএভাবো বইলো না।আল্লাহর উপর ভরসা রাখো।আমরা খারাপ কিছু চাচ্ছি না৷আমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চাচ্ছি।ইনশাআল্লাহ আমাদের ইচ্ছাটা আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন।
জান্নাতঃহুম।
এরপর আমি আর জান্নাত একসাথে অনেকক্ষন হাঁটাহাঁটি করলাম।জান্নাত আমার হাতটা নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে হাঁটছিলো কারন…..
চলবে…..