লাবন্যর ভালোবাসায় তো তখন আমি বিভর হয়ে ভাবছি,আমার পাগলিটা কত্ত সুইট৷মন চায় ওকে বুকের ভিতর নিয়েই সারাজীবন পাড় করে দেই৷যাক আগামিকাল আরও মজা করব৷
পরেরদিন যেই ভাবা সেই কাজ৷সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকে ডুকলাম৷
ওমাহ ডুকতেই দেখি লাবন্যর মেসেজ.
–আসসালামু আলাইকুম৷গুড মর্নিং৷কেমন আছেন?
–চুপ করে ভাবছি,এত সকালেই মেসেজ?
–কি হলো মেসেজ সীন করেও রিপ্লে দিচ্ছেন না কেন?
–ওরে আল্লাহ?আমি মেসেজ সীন করলাম বুঝলো কেমনে?ও তো একটিভ ছিল না৷আর সিন করার সাথে সাথেই?(মনে মনে)
–কি হলো ?কথা বলছেন না কেন?
–ওয়ালাইকুম আসসালাম৷গুড মর্নিং ,কেমন আছেন?
–আমি আগে প্রশ্ন করছি তো,আগে আমার উত্তর দিন
–এহহহহহহ,এখন আর আমি তোমার সহকারি না,এখন তোমার অজানা প্রেমিক তুমি,রাগ দেখালে চলবে না,এখন রাগ দেখাবো আমি হি হি হি(মনে মনে)
–কি হলো কথা বলছেন না কেন?
–আগে উত্তর দিলে দেন,নয়ত আমি গেলাম,
–এই না না,আপনি যাবেন না,আমি আগেই দিচ্ছি,আমি ভালো আছি,এবার আপনি বলুন কেমন আছেন?
–হুম ভালো৷কি করেন?
–শুয়ে আছি!আপনি?
-আমিও,
তখন ওর সাথে কথা বলা শুরু করলাম৷আর ভাবলাম ওর সাথে আরেকটু অন্যভাবে মজা করলে কেমন হয়?তখনই আমি চ্যাট করতে করতে লাবন্যর রুমের সামনে গিয়ে দরজা নক করতে লাগলাম৷
কিন্তু সাড়া দিচ্ছেনা৷
ইসসস কি মাইয়া রে,চ্যাটিং করায় কত ব্যস্ত!কে ডাকছে?কেন ডাকছে কোনো খেয়ালই নেই!
দরজায় তখনও চ্যাট করা অবস্থাই জোড়ে জোড়ে ধাক্কা দিতে লাগলাম৷আর লাবন্য দরজা খোলার সাথে সাথেই ফোন পকেটে ভরে ফেললাম৷আর লাবন্যর দিকে তাকিয়ে আমি তখনও অবাক হয়েই রইলাম৷কারন ও তখনও ফোনের দিকেই তাকিয়ে আছে৷
–ওই ,এত জোড়ে জোড়ে ডাকছি তোমায় শুনতে পাওনি?(আমি)
–ওহ !তুমিই গন্ডারের মত এমন জোড়ে জোড়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করছো,তো বলো কি বলবা
-কেন?ব্যস্ত নাকি?
–না,আমার ঘুম পাচ্ছে ,ঘুমাবো
–আল্লাহ কি মিছা কথা বলতাছে,ও তো জীবন্ত মানূষ মেরে ফেলবে দেখছি(ভিরভির করে)
–ওই,কি ভিরভির করছো?যা বলার তাড়াতাড়ি বলো,নয়ত দরজা বন্ধ করে দিলাম
–আসলে বলছিলাম কি?আসলে
–ওই কী বলার বলবা?(রেগে)
–আসলে সকাল থেকে মনটা খারাপ তাই ভাবছিলাম কি তোমার সাথে একটু আড্ডা বা গল্প করলে হয়ত মনটা ভালো হয়ে যাবে,এই চলো না একটু গল্প করি(মিথ্যা বললাম,আর দেখতে লাগলাম ওর রিয়েকশনটা কি)
–ধুরররর,তুমি যাও তো,আমি ঘুমাবো,বলেই দরজা বন্ধ করে দিল
হায় আল্লাহ!!!!আমার সাথে এমন করছে কেন?তারপরই মনে মনে বললাম,, লাবন্য,করো করো,আরো বেশি করে করো,তুমি তো জানোনা,মুই কিডা?মোরে যহন চিনবা ,তহন বুঝি হালাইবা,মুই কি জিনিস৷ হি হি হি
তখনই ওর ফোনে একটানা কতগুলো মেসেজ দিলাম৷আর শেষে একটা মেসেড দিলাম
–হুম ভালোই,কথা বলতে এসে আপনি না বলেই চলে গেলেন,খুব ভালো(আমি)
–ওপপপপস,আমি না যাই নি,প্লীজ ভুল বুঝবেন না,আসলে যা হইছে ওই আরমানের বাচ্ছার জন্যই……..
–আরমা?এই আরমান আবার কে?নিশ্চয় আপনার হাসবেন্ড?
–আরে না,আমার তো বিয়েই হয়নি,
–ওহ,তাহলে আরমান বুঝি আপনার ইয়ে……(একটু মজা করে)
–দেখুন,আমার কোনো ইয়ে টিয়ে নেই,আর আরমান আমার ভালো বন্ধু,আর আমার বেষ্টফ্রেন্ড
–ওমা,তাহলে তো আরও ভালো,
–ভালো মানে?কি বলতে চাচ্ছেন?
–ভালো মানে খুব সহজ,বেষ্টফ্রেন্ড থেকে লাইফ পার্টনার খুব ভালো
–এই দেখুন, ও আমার ফ্রেন্ড,তো লাইফ পার্টনার হবে কিভাবে?আর ওকে আমি বন্ধু হিসাবেই জানি,লাইফ পার্টনার হিসাবে নয়।
–আপনি জানেন?বেষ্টফ্রেন্ড যদি লাইফ পার্টনার হয়,তাহলে কতটা সুখের সংসার হয়?জানেন আপনি?
–এই দেখুন,ওকে আমি কখনোই ওইটা ভাবি না।
–এহহহহ ভাবেনা৷আমাকে অন্যদিকে ভালোবেসে নিজেকেই ও নিজে ভুলে যাচ্ছে(মনে মনে)
–এই চুপ কেন?
–না ভাবছি,আচ্ছা আপনি কোথায় থাকেন?(আমি)
–আমি ঢাকাতে থাকি,আপনি?
–আমিও(মজাই মজা )
–ওপপস তাহলে তো ভালই৷আমিও ঢাকা আপনিও ঢাকা৷তো ঢাকার কোথায় থাকেন আপনি?
–সময় হলেই দেখবেন৷আচ্ছা এখন তাহলে ভালো থাকবেন,আমি এখন অফ লাইনে চলে যাবো
–হুম,তবে একটা অনুরোধ রাখবেন
–হুম বলুন
–আপনি আবার কখন ফেসবুকে আসবেন সেটা তো আর আমি জানিনা৷যদি বলে যেতেন..
–কি মাইয়ারে?সারাটাদিন সাথে সাথেই থাকি,তবুও তো বলল না,আরমান,তুমি কখন কখন আমার সাথে এসে কথা বলবে?উল্টো তাড়িয়ে দেয় আর ফেসবুকে না চিনেই আমাকে………..(মনে মনে)
–কি হলো?কোনো প্রবলেম(লাবন্য)
–আরে,আমার সাথে আপনার ফেসবুকে আসার সম্পর্ক কি?
–দেখুন,আপনি আমার প্রিয় রাইটার৷আপনার সাথে কথা বলতে পারলে আমার খুব খুব ভালো লাগে৷প্লিজ বলুন আবার কখন আসবেন
–হুম৷বিকেল ৪টার দিকে
–হুম৷ধন্যবাদ
–বাই ভালো থাকবেন
–আপনিও ভালো থাকবেন৷
ফেসবুক থেকে বের হয়ে তো ঝাকানাকা ড্যান্স দিতে শুরু করলাম৷
এমন মজা কয়জনে করতে পারে?টাইম হলে যখন ওর সামনে এসে হাজির হবো,ওর চোখ তো আসমানে উঠে যাবে৷ হি হি হি৷
ওর কথা এখন যতই ভাবছি ততই ড্যান্স করছি৷
ওপপপস ভাবতেই অবাক লাগে,মানুষকে মজা দিতে গিয়ে গল্প লিখে,নিজের ভালোবাসার কাছে আজ এভাবে উপস্থিত হবো৷যাক মানুষকে যেমন আনন্দ দিতে পারছি৷তেমনি গল্পের মাধ্যমে আমার পাগলিটাকেও পেয়ে যাচ্ছি৷তখনই একটা বল্টু মার্কা আবোল তাবোল গান বলতে লাগলাম৷মনের ভিতর খুশির আনন্দে ঢেউ খেলছে৷
তখনই মনের আনন্দে শরিরের একটা সাইড কাপতে লাগল৷খুব ভয় পেয়ে গেলাম৷
আল্লাহ গো,আমার কিছু হয় নি তো৷তখনই খেয়াল হলো,,আরে আমার তো ফোন কাপতাছে,ফোন আসছে৷হায় রে আল্লাহ,আবেগের ঠেলায় পাগল হয়ে গেলাম নাকি৷
ফোন রিসিভ করেই
–হ্যালো কে বলছেন?(আমি)
–ওই শালা,আমি ,(ওপাশ)
–আরে আমি টা কে?
–আরে হারামজাদা,আমি রনি,তোর বন্ধু,ভুইলা গেছোছ নাকি?
—নারে দোস্ত,ভুলমু কেন?বল বাবা মা কেমন আছে?
–দোস্ত .আমি তো ফাইসা গেছি রে
–আরে কি হইছে সেটা বল?
–দোস্ত তোর টাকা পাঠানোর পর ,আমি ফাইসা গেছি রে
–আরে কি হইছে বলবি তো?
–দোস্ত তোর পাঠানো টাকা যখন চাচির কাছে দিতে গেলাম৷তখনই আমাকে গুয়েন্দার মত জেরা করতে লাগল৷আর অনেকদিন ধরেই এমন করছে
-আরে কি করছে,সেটা তো বলবি
–দোস্ত,চাচিকে প্রতিমাসে তোর পাঠানো টাকা দিচ্ছি আর এটা নিয়েই যত জামেলা৷কেন এত টাকা দিচ্ছি?এত টাকা আমি কোথায় পাচ্ছি,আর এতবছর ধরে কেন টাকা দিচ্ছি?অনেকদিন ধরেই বলিনি জিজ্ঞাসা করলে আড়াল হয়ে যেতাম কিন্তু আজ যেভাবে জেড়া করতে লাগল………৷তবে এখন আর শেষমেষ চাপে পড়ে….
–শেষমেষ চাপে পড়ে কি?বলে দিয়েছিস নাকি আমি টাকা পাঠাচ্ছি?
–হুম রে দোস্ত বলেই তো দিছি
–হায় হায় কছ কি?এখন কি হবে?
–দোস্ত, চাচা বলছে তুই তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে
–কিন্তু বাবা যে আমাকে কসম দিছে
–ধুররর তোর কসম৷চাচা বলছে তোর প্রতি কোনো রাগ নেই৷
ঠিক তখনই কেউ ওপাশ থেকে কথা বলতে লাগল
–বাবা,তুই আর আমার ওপর রাগ করে থাকিস না,তুই বাসায় এসে পড় বাবা,তোকে ছাড়া বাসাটা খুব নিঃস্ব মনে হয় রে,
-বাবা(বুঝতে পারলাম,এটা আমার বাবা)
-হুম বাবা,তুই চলে আয় বাবা,তুই আমার ওপর আর রাগ করে থাকিস না৷আর আমাকে তুই মাফ করে দে বাবা(কান্না করে দিল)
চোখের পানি কোনোভাবেই আটকাতে পারছিলাম না৷আসলেই বাবা মা তো বাবা মা ই৷ব্যস্ত শহরে পড়ে সবই ভুলে গিয়েছিলাম৷কিন্তু যখনই বাবার কন্ঠটা শুনতে পেলাম৷ঠিক তখনই কলিজাটা জুড়িয়ে গেল৷ইস কতই না মায়ামাখা সেই কান্নায়৷
–কি রে বাবা,চুপ করে থাকবি?কথা বলবি না?
–বাবা,তুমি আমাকে মাফ করে দাও,আমি অনেক অপরাধ করে ফেলছি৷বাবা তুমি একদম কান্না করো না৷আমি সামনের সপ্তাহেই বাসায় এসে পরব
–সত্যি আসবি তো
–হুম বাবা
সেদিন বাবা আর মায়ের সাথে অনেকক্ষন কথা বলেছিলাম৷ মনটা একদম হালকা হয়ে গেল৷যাক এবার এক সাথে ২টা কাজই করব৷বাসায় ফিরে যাবো,আর লাবন্যকেও সাথে নিয়ে যাবো,আর তারপরই বাসায় গিয়ে ওকে বিয়ে করব৷আর আংকেলকেও সত্যি কথাটা বলতে হবে,আমি এতিম না৷আমার বাবা মা আছে৷আর আমিও রাস্তার কোনো ছেলে না৷আমি একজন সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার৷বিয়ে যখন করব সত্যিটা বলেই করব৷
বিকেল তিনটার দিকে
হঠাৎই মনে হলো
আরে একটু পর তো লাবন্যর সাথে ফেসবুকে কথা বলার সময়৷৪টা বাজে কথা বলব৷তার চেয়ে ভালো আগে আরেকটু মজা করে নেই৷
তখনই লাবন্যর রুমে গেলাম৷দরজাটা খুলাই ছিলো৷তাই ভিতরে গিয়ে বসতেই
লাবন্য রুমে আসল৷আর তখন ওর চুল বেয়ে বেয়ে পানি পড়তে লাগল৷তারমানে ও এখন গোছল করে এসেছে৷ওপপস আমার পাগলিটাকে যে কি সুন্দর লাগছে!!!!একদম মন ছোয়ার মত৷
আমি লাবন্যর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম৷এমন একটা মেয়ে আমার বউ হবে,বাবা মা দেখলে তো হেব্বি খুশি হবে৷
ভেজা চুলে যেন একটা মায়াবতী দাড়িয়ে আছে৷ভেজা চুলে যেন লাবন্যর সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে৷আমি তখনও ওর দিকে তাকিয়েই আছি৷হঠাৎ ই লাবন্য আমার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল৷আর আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাল আর বলল
-ওই তুমি আমার রুমে কখন আসছো?(লাবন্য)
–হা করেই আছি
–ওই কথা কানে যাচ্ছে না?(চিৎকার দিয়ে)
-জ্বি কিছু বলছো লাবন্য?(আমি)
–ওই তোমার কানে কি সমস্যা হইছে নাকি?এতক্ষন ধরে ডাকছি আর ওনি এখন বলছে,ডাকছি কিনা?
–হুম বলো,,, তো কি জন্য আমাকে ডাকছো?
–আমার রুমে তুমি কখন আর কেন আসছো?
–আরে তোমার রুমে আসাও কি এখন আমার জন্য নিষেধ হয়ে গেছে নাকি?কই আগে তো এমন করো নি?
–আগে কি করছি না করছি সেগুলো বলে লাভ নাই,এখন যেটা বলছি সেটাই দেখো
–হুম দেখতেই তো পাচ্ছি,তো একটা কথা বলার ছিল
–হুম বলো(অন্যদিকে তাকিয়ে)
–দেখছো বিকেল টা কত সুন্দর,চলো না লাবন্য একটু সমুদ্র পাড় থেকে ঘুরে আসি,,,,,,
–ওপপপস ভালো লাগছে না
–কেন?তুমি তো সমুদ্র অনেক পছন্দ করো৷তো ইদানীং তোমার কি হইছে?আর আমার সাথেও বেশি কথা বলো না।
–ওপপপস আরমান যাও তো,আমি এখন ঘুমাবো
–ইসসসস কত্ত বড় মিথ্যাবাদি !!!একটু পর ৪টা বেজে যাবে ,আর ৪টার সময় রাজপুত্র অর্থাৎ আমার সাথে চ্যাট করবে,আর আমাকে বলছে ঘুমাবে,,,,,বল্লেই হলো??(মনে মনে)
–ওই তুমি চুপ কেন?
–চলো না লাবন্য একটু ঘুরে আসি,মনটা একদমই ভালো নাই,
–তো আমি কি করবো?
–তুমি আমার সাথে চলো না একটু ঘুরে আসি,আর দুজনে গল্প করলে আর ঘুরে আসলে হয়ত মনটা ভালো হয়ে যাবে,চলো না লাবন্য….
–দেখো আরমান আমি আবারও বলছি আমি এখন ঘুমাবো ,তো এখন যেতে পারব না।
–তো বলো কখন আমার সাথে ঘূরতে যাইবা
–আমি এখন যাবো না,,আর কখন যাবো সেটাও কি বলতে হবে নাকি?
–প্লিজ লাবন্য এমন করো না,বলো কখন যাইবা
এরপর লাবন্যকে অনেক রিকোয়েষ্টের পর লাবন্য বলল কালকে সকালে যাবে৷আর এখন যেনো আমি বের হই৷
কি আর করার রুম থেকে বের হয়েই গেলাম৷আর ভাবলাম এখন ফেসবুকে ওর সাথে একটু মজা করলে কেমন হয়?যেই ভাবা সেই কাজ৷ঘড়ির কাটাতে ৪টা বাজতেই ফেসবুকে ডুকলাম৷আর ডুকার পরই দেখি,লাবন্যর মেসেজ৷
—আসসালামু আলাইকুম৷কেমন আছেন আপনি?(লাবন্য)
–ওয়ালাইকুম আসসালাম৷জ্বি ভালো আছি,আপনি?(আমি)
–হুম,আমিও ভালো আছি৷তো কি করেন?
–কিছু না,আসলে…
–আসলে কি?
–আসলে মনটা ভালো না তো,তাই কিছুই ভালো লাগছে না(একটু মজা করেই বললাম)
–হায় আল্লাহ!কি হইছে আপনার?বলুন,,প্লিজ প্রবলেম না থাকলে আমাকে বলুন।
–আসলে কি যে বলি,অযথাই মনটা খারাপ হয়ে আছে
–ওহহ!! কোনো সমস্যা নাই,আমি আপনার মন ভালো করে দিবো
–আপনি ভালো করে দিবেন কিন্তু কিভাবে?
—আরে আমি মন ভালো করার অনেক কিছুই জানি৷এক কাজ করেন আপনাকে একটা জোকস শোনাই,আর আমার সাথে কিছুক্ষন গল্প করুন,আপনার মন ভালো করে দিবোই
–আপনি গল্প করবেন আমার সাথে?
–হুম
-আপনার কোনো প্রবলেম বা টাইম আছে তো
–টাইম আছে মানে?আমি তো একদম ফ্রি
—আল্লাহ একটা দড়ি ফালাও মুই উপরে উইঠা যাই৷একটু আগেই আমাকে বলছে ঘুমাবে,আর এখন বলছে ও নাকি একদম ফ্রি৷কত মিথ্যা বলতে পারে ও৷তবে যখন আমার জন্যই এত কিছু তখন তো খারাপ লাগলেও আমার জন্য ভালো(মনে মনে)
–কি হলো কথা বলছেন না কেন?(লাবন্য)
–বলছি যে একটু আগেই তো বলছিলেন আপনার টাইম নেই,আপনি ঘুমাবেন(এইরে এটা কি মেসেজ দিলাম?ও ঘুমানোর কথা বলছে এটা যদি জিজ্ঞাসা করে আমি কিভাবে জানলাম?কারন এই কথাটা আরমানকে ছাড়া তো আর কাউকে বলেনি)
–এই এই আপনাকে ঘুমানোর কথা কে বলছে?আর আমি কখন বললাম ঘুমাবো?আমি তো শুধু আরমানকে ঘুমানোর এই মিথ্যা কথাটা বলেছিলাম৷কিন্তু আপনি সেটা জানলেন কিভাবে?
–ওপপস ,নিজের ভুলের জন্য নিজেই ধরা খেয়ে যাবো না তো?এবার যদি ধরা খেয়ে যাই?ও যদি জেনে যায় আমিই আরমান?(মনে মনে)
–ওই কথা বলছেন না কেন?
–আসলে ভাবছিলাম কি?বেশিরভাগ মানুষই তো বিকেল বেলা এই সময় ঘুমায়,তাই আমারও মনে হলো যদি আপনিও ঘুমান,তাই বলছিলাম আর কি(কথাটা ঘুরানোর চেষ্টা করলাম)
— ওহ এই কথা?আসলে আমি তো বিকেল বেলা ঘূমাই না
–হুম না ঘুমালেই ভালো৷তো এই আরমান কি সারাদিনই আপনার সাথে থাকে নাকি?খালি আরমান আরমান করেন ৷ভালো বেসে ফেলেছেন নাকি?(একটু মজা করে)
–দেখুন আমি আগেই বলেছি,ও আমার ফেন্ড আর কিছু না৷তো এগুলো বলার মানেই হয় না।
–আপনি যাই বলেন,আমি বুঝে গেছি আপনি মনে মনে আরমানকেই ইয়ে করেন
–দেখুন উল্টা পাল্টা কথা বলবেন না৷আমি আরমানকে ভালোবাসব কেন?আর আমার মনে ও থাকবে কেন?আমার মনে তো শুধু আপনি…..
–আমিহহহহহ?(হুররররে ওর মুখ থেকে শুনে ফেলছি)
-এই না না,আমি তো শুধু বলতে চাইছি,আমার মনে শুধু আমার প্রিয় রাইটার ই আছে
–তা কে সে ভাগ্যবান রাইটার?যে আপনার মনে এত মজবুত ভাবে আছে?
–সত্যি বলতে…
–হুম বলেন..
–রাগ করবেন না তো?
–না রাগ করবো না৷এবার বলুন
–আসলে আমার প্রিয় রাইটার আপনি
–ওমা তাই নাকি?
–হুম৷
–হুম ভালো৷তো একটা কথা বলব?
–জ্বি বলেন
–আমি না আবার ফেসবুক থেকে চলে যাবো৷আর নাও আসতে পারি,যদি আপনার কোনো কথা বলার থাকে বলতে পারেন(ওর মুখ থেকে ভালোবাসার কথাটা শুনার জন্য)
–কি বলছেন আপনি?প্লীজ আপনি আর ফেসবুক থেকে যাবেন না৷আপনি এবার চলে গেলে সত্যি বলছি আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারব না
–কেন?আপনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবেন না কেন?
–দেখুন কেন পারব না সেটা জানিনা৷তবে আপনাকে আমি কোনো ভাবেই হারাতে চাই না
–ওরে বাবা,আমাকে হারালেই কি আর না হারালেই কি(ওপপস ভালোবাসি বলছে না কেন?)
–দেখুন এমন করবেন না প্লীজ,আপনার পায়ে পড়ি আপনি এমন করবেন না৷আর আপনার প্রবলেম না থাকলে প্লিজ আপনার নাম্বারটা দিন৷জাষ্ট ২মিনিট কথা বলব
–আরে নাম্বার দিয়ে কি করবেন৷তার চেয়ে ভালো৷এখানেই যা বলার বলেন
–প্লিজ নাম্বারটা দিন,নয়ত আপনি চলে যাবার পর আমি এই পৃথিবি থেকেই চলে যাবো
–ওই ওই এগুলো কি বলছেন এগূলো?
আর তখনই একটা নাম্বার লাবন্যকে মেসেজে দিলাম৷আর এই নাম্বারটা লাবন্যর অজানা একটা নাম্বার৷আর নাম্বার দিতেই
–এটা কি আপনার নাম্বার ই?(লাবন্য)
–এটা আমার নাম্বার ই৷
তখনই ও কল দিলো৷আর আমি ফোনটা কেটে বেক করলাম৷আর দ্রুত মুখে কাপড় পেচিয়ে নিলাম যাতে কন্ঠ না বুঝে তখন ফোন ধরতেই
–হ্যালো,আমি বোকা রাজপুত্র😁 বলছি!
–আমি লাবন্য বলছি৷ফোন কেটে দিয়ে আপনি কল দিলেন কেন?
-আমি কল দেই আর আপনি দেন সেটা বড় কথা না৷আর আপনি এগুলো কি বলছেন?–দেখুন,আপনি এমন করবেন না৷আপনি কোথাও যাবেন না৷আর আপনাকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না(কান্না করে দিছে)
–আমাকে ছাড়া থাকতে পারবেন না মানে?আমি আপনার কে?
-আপনি আমার সব,আপনাকে ছাড়া সত্যিই আমি থাকতে পারব না৷অনেকদিন পর আপনাকে পেয়েছি,আর আপনি হয়ত জানেন না,এতগুলো দিন আমি কতটা কষ্টে কাটিয়েছি৷যদিও সব সময় সুখি থাকার অভিনয় করতাম৷কিন্তু আপনাকে ছাড়া সত্যিই আমি ভালো থাকতে পারিনি
–আজব তো!আমাকে ছাড়া আপনি খারাপ থাকবেন কেন?আমি কি আপনাকে কিছু বলেছি?আপনার সাথে তো এর আগে আমি কখনোই কথা বলিনি৷এবারই প্রথম তো আমার জন্য এমন করবেন কেন?
–দেখুন এত কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না৷আমি বলতে পারব না(কান্না করতে করতে)
(ইসস পাগলিটা কান্না করছে,তারপরও তো পেত্নিটা যে আমাকে ভালোবাসে সেটা একবারও মুখ ফুটে বলছে না৷ও বলে দিলেই তো সব হয়ে যেত)
–কি হলো চুপ করে আছেন কেন?ভাবছেন এই পাগল মেয়েটা কি বলছে?আর কেন এগূলো বলছে?আসলে আমি এমনই যাকে মন থেকে গ্রহন করি তার জন্য সব করতে পারি
–হুম খুব ভালো৷বাট আমাকে এগূলো বলছেন কেন?
–আপনাকেই তো বলব,কারন আপনি…..(কান্না
করেই চলছে)
(ইশশশ আর সহ্য করতে পারছিনা ওর কান্না,এবার আরেকটা চেষ্টা করব,আর সফল না হলে আর এমন করব না)
–আমি?আমি আপনার কে?আমার জন্য কেন কেন কান্না করবেন?আমি আপনার কে ?বলূন
–ফোপানোর আওয়াজ(কান্না করছে)
–চুপ করে আছেন কেন?যদি না বলেন তাহলে এখনই ফেসবুক ডিএক্টিভেট করে দিবো৷আর এই নাম্বারটাও চিরতরে বন্ধ করে দিবো,তখন চাইলেও বলতে পারবেন না।
–এই না,প্লিজ এমন করবেন না
–তাহলে বলুন আমি আপনার কে?আর কেন আপনি আমার জন্য কান্না করবেন?(একটু প্রেসার দিয়ে)
–আপনি আমার সব!আমার পৃথিবী ,নিঃশ্বাস,বিশ্বাস,আমার কলিজা,হৃৎপিন্ড সব,আর আমি আপনাকে পাগলের মত ভালোবাসি!কখনো হারাতে চাই না,কখনোই না(চিৎকার করে কান্না করে দিছে৷
(ওর কান্নাটা আর সহ্য করতে পারলাম না৷এতটা ভালোবাসে আমায়?তখন নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে পানি পরছিলো৷তবে পানিটা কষ্টের নয় আনন্দের৷ওপস অনেক সাধনার পর পাগলিটা বলেই ফেলছে,আমাকে ভালোবাসে৷খুব খুশি লাগছে কিন্তু তার চেয়ে বেশি খারাপও লাগল কারন আমি আমার পাগলিটাকে অনেক কান্না করাইছি৷অনেক বেশি করে ফেলছি৷তখন নিজের ওপরই রাগ হতে লাগল৷
–প্লিজ লাবন্য,আর কেঁদো না,সত্যি বলতে আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি৷খুব ভালোবাসি,আর তোমার মুখ থেকে এটা শুনার জন্যই এমনটা করছি(তুমি করেই বলা শুরু করলাম)
–সত্যি ?আপনিও আমাকে ভালোবাসেন?
–হুম৷তোমার মেসেজগুলো দেখে,আমিও তোমার প্রেমে পড়ে গেছি৷কিন্তু একটা সমস্যা যে আছে….
–কি সমস্যা ?আপনি আমাকে বলেন প্লিজ৷
–আমাকে দেখেছো?
–না৷
(তখনই ভাবলাম ওকে এখন পরিচয়টা না দিয়ে একেবারে ওর সামনে দাড়িয়েই সব বলে দিবো)
-লাবন্য,সত্যি বলতে আমি অনেক কালো একটা ছেলে,দেখতে একটুও ভালো না৷কেউ আমাকে কালো বলে পছন্দ করেনা(মিথ্যা বললাম)
–দেখুন,এতে আমার কোনো সমস্যা নেই,আমি তারপরও আপনাকে অনেক ভালোবাসি,আর মন থেকে ভালোবাসলে এগুলো কোনো বিষয় না
–হুম৷আরও প্রবলেম আছে,আমি অনেক গরীব,ঠিকমত খেতেও পারিনা
–তাতেও সমস্যা নাই,আপনার বুকে মাথা রাখতে পারলেই আমার সব খিদে চলে যাবে
বুঝতে পারলাম লাবন্যর পুরো পৃথিবীটা তখন একটা অচেনা ছেলেকে নিয়েই ঘিরে আছে৷কতটা ভালোবাসলে ও এমন করতে পারে৷তখনই ওকে বললাম একটু ফেসবুকে আসতে৷ও ফেসবুকে আসতেই৷
-এই শুনো,এখন থেকে তুমি আমাকে তুমি করে বলবা(আমি)
–আমি পারব না৷আপনি করেই বলি?
–না,আমাকে যেহেতু ভালোবাসো৷তো আমাকে তুমি করেই বলবা৷
–হুম
–একটু ওয়েট করো৷আমি আমার পিক দিচ্ছি
তখনই একটা আমার চেয়ে কম সুন্দর ছেলের ছবি ওর ইনবক্সে পাঠালাম৷আর তখনই ও বলে উঠল
–এটা কে(লাবন্য)
–এটাই আমি৷তেমন সুন্দর না?তাই আমাকে কেউ পছন্দ করে না
–হা হা হা .
–হাসছো কেন?
–এটা তুমি?আর হ্যা তুমি যদি এর চেয়ে মানে কয়লার মতও কালো হও তারপরও আমি তোমাকেই ভালোবাসি৷কারন আমি তো তোমাকে মন থেকে ভালোবাসি
(কি বলব বুঝতে পারছি না৷এতটা ভালোবাসে আমায়??৷অথচ আমার পরিচয় জানেনা বলে আমি এই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত৷ তাহলে তো পরিচয়টা দিতেই হয়
আর লাবন্যর এই ভালোবাসাগুলো কে পুজি করে সারাটা জীবন পার করেই দিবো৷ওকে কখনোই কষ্ট দিবো না৷লাবন্যকে নিজের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে নতুন করে ঘর বাধব৷যেখানে থাকবে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা………..
চলবে………………