বসের দেমাগি মেয়ে যখন রোমান্টিক বউ পর্ব_০৮


–কি হলো আরমান,তুমি চুপ হয়ে গেলা কেন?(লাবন্যর বাবা)
–কই না তো,বলেন আংকেল আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি!
–আরমান,আমি যেহেতু ভাবছি লাবন্যর বিয়েটা আমি বাসায় গিয়েই দিয়ে দিবো,তো তোমার ওপরই কিন্তু সব দায়িত্ব পড়বে

(কথাটা শুনার পর মনটাই ভেঙ্গে গেল,কি করতে চেয়েছিলাম,আর আমার জীবনে কি হয়ে গেল,যাকে ভালোবাসি তার বিয়ের দায়িত্বই নাকি এখন আমার কাধে,?দুনিয়া বড়ই অদ্ভুদ)
–কি হলো আরমান ,চূপ কেন?
–হুম আংকেল,আমি আপনার আদেশ পালন করব
–কোনো কষ্ট হবে না তো?(একটু হেসে)
–কি যে বলেন?কষ্ট হবে কেন?আপনি আমার বাবার মত,আর আপনার কথা পালন করব,এতে কষ্টের কি আছে?(হাসিমূখে)

(যদিও হাসিমুখেই কথাটা বলছিলাম কিন্তু তখন কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে,কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে)
–হুম আমি জানতাম তুমি পারবা,এজন্যই তো তোমাকে এত ভালোবাসি
–হুম আংকেল
–আর শুনো বিয়ের পর কিন্তু আমার মেয়েকে একদমই কষ্ট দিতে পারবা না!বুঝেছো?
–বিয়ের পর কষ্ট দিতে পারব না মানে কি আংকেল?এমনটা করার আমার ইচ্ছা নেই,আর ওর বিয়ের পর তো আমি ইচ্ছা করলেও সেটা করতে পারব না,কারন ও তো আমার থেকে অনেক দূরে থাকবে!
— হা হা হা
-হাসছেন কেন?
–আরে বোকা দূরে থাকবে কেন?ও তো সারাজীবন তোমার পাশেই থাকবে!
-মানে?
–মানে লাবন্যর সাথে অনেক আগেই মনে মনে তোমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছি,আর তোমার সাথেই তো লাবন্যর বিয়ে দিবো
(তখন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিনা,কি বলছে ওনি?)

–কি হলো বাবা,?তুমি কি আমার মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি না?আমার কথাটা কি তুমি ফেলে দিবা
(মনে মনে তো তখন লাড্ডু ফুটতাছে)
–কি যে বলেন আংকেল?আপনি মজা করছেন তাই না?
-আরে মজা করব কেন?তোমার সাথেই লাবন্যর বিয়ে দিবে,প্লিজ বাবা,আমার কথাটা ফিরিয়ে দিও না
-আরে,কি যে বলেন,আপনি একটা কথা বলেছেন,সেটা কি আমি না রেখে পারি?(কুচু কুচু হোতা হে হি হি হি)

–হুম ,আমার তোমার ওপর পুরো ভরসা ছিল,তাই কথাটা তোমাকে বলেছি,আর আমি যতটুকু জানি তুমি লাবন্যকে ভালোবাসো।
–হায় হায়, বলে কি?ওনি জানলেন কেমনে?(মনে মনে)

–কি হলো চুপ কেন?আমি জানি তুমি লাবন্যকে তোমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসো
-কে বলছে আংকেল?
-দেখো বাবা,তুমি যেভাবে ওইদিন ওর জীবন বাঁচালে,নিজের জীবনের ঝুকিও নীয়েও লাবন্যকে বাঁচালে,
–কি যে বলেন,আসলে আমি তো ওকে….
–ওকে কি আরমান।
–কই না তো,কিছুনা।
-দেখো বাবা,এই বয়সে আমিও একটা সময় ছিলাম,আর আমিও লাবন্যর মাকে প্রেম করেই বিয়ে করেছিলাম
–কি বলছেন(অবাক হয়ে)

(আরে অবাক না হয়ে পারি নাকি?মোর শশুর আব্বায়ও ,থাক আর কমু না হি হি
,কি যুগ আইলো হবু শ্বশুর আব্বা প্রেম করে বিয়ে করছে সেটা তার হবু জামাইকে বলছে , হি হি হি৷আর হ্যা আমি কিন্তু এক পায়ে রাজী লাবন্যকে বিয়ে করার জন্য৷আর ওর সাথে বিয়ে ঠিক হইছে ,সো ওনি তো হবু শ্বশুরই হি হি হি)
–লজ্জা পাবার কিছুই নাই,লাবন্য আমার মেয়ে যেমন,তেমন আমি ওর ভালো বন্ধুও,তো আমাকে…
-থাক থাক আংকেল আর বলতে হবে না,আমি বুঝে গেছি
–কচুটা বুঝেছো,তুমি জানো লাবন্যর আম্মুও প্রথমে আমার কে ছিল?
–কে ছিল আংকেল(একটু বেশিই অবাক হয়ে)
–লাবন্যর আম্মু আমার অফিসের বসের মেয়েই ছিলো,
–হায় আল্লাহ,কি বলে ওনি?আমিও বসের মেয়েকেই বিয়ে করব,আর ওনি, হি হি মজাই মজা

–শুনো,লাবন্যকে এখনও বিয়ের বিষয়ে বলিনি,বাসায় গিয়ে একেবারেই বলব.তারপরই তোমাদের বিয়ে দিবো
–আরে আমার শ্বশুর আব্বারে..
বলেই আবেগের বশে ওনার কোলে লাফিয়ে উঠলাম৷কি খবরটাই না দিলো,
–এই ছেলে,নামো বলছি,বেয়াদপ কোথাকার
–সরি আংকেল৷
আসলে অতিরিক্ত আনন্দে লুঙ্গি ড্যান্স ….(ইসস রে ,কি বলছি এগূলো)

তখনই ওনি মুচকি একটা হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে রুম থেকে চলে গেল৷
আর যাওয়ার পর তো নিজের ওপরই হেব্বি রাগ উঠল,এত আবেগি হইলাম কখন?আসলে খুশির ঠেলায় বুঝতেই পারিনি লাফ দিয়ে কোথায় উঠে পরছি,ওই মিয়ারা আপনারা কিন্তু পাগল টাগল বইলেন না,আর বললেও লাভ হবে না,
পাইয়া গেছি আমি আমার লাবন্যরে হি হি হি৷
তখনই মনের ভিতর লুঙ্গি ড্যান্স শুরু হতে লাগল৷
মোবাইলে গানটা খুজে বের করেই প্যান্টের ওপর লুঙ্গিটা পরে,শুরু করে দিলাম লুঙ্গি ড্যান্স,লুঙ্গি ড্যান্স৷
মনের ভিতর তো বোমা ফাটতে লাগল৷কি খবরটাই না শুনলাম রে৷
নাচ দিতেই লাগলাম
হঠাৎ ই কারো হাসির শব্দ আসতে লাগল৷
ভাবলাম ফোনের ভিতর তো এই গানে হাসি ছিল না,তো হাসির আওয়াজ আসে কোথা থেকে?
তখনই চোখ দরজার দিকে তাকাতেই মুখ দিয়ে লুঙ্গি লু লু বের হতে লাগল৷একদম তোতলা হয়ে গেলাম৷
কারন লাবন্য দরজার পাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমার নাচ দেখছিলো৷
ইসসসস রে,দরজাটা দিতেই তো মনে ছিল না,এখন লাবন্য কি না কি ভাবে?
তখনই লাবন্য বলে উঠল
-হি হি হি,ছাগলটা কিভাবে লাফাচ্ছে,
-ওই ওই একদম ছাগল বলবানা ,তুমি জানো আমি কি করছিলাম?
–কি করছিলে?
–আমি বিশ্ব বিখ্যাত ,সেই দুর্দান্ত নামি দামি লুঙ্গি ড্যান্স গানে ড্যান্স করছিলাম৷
-নামি দামি না ছাই,,
–ওই একদম ছাই বলবানা!তুমি জানো গানটা কত্ত সুন্দর,সিঙ্গেল ছেলেদের সব খুশির সময়ই ,তাদের মনে লুঙ্গি ড্যান্স গান বাজে
–ও তাই?তো তুমি কি খুশির খবর পাইলা
–কিছুনা
-বলো বলছী
–বলব না,দেখছো আমার লুঙ্গি ড্যান্স টা কেমন?একদম মন মাতানো,বুঝেছো
আর তখনই হঠাৎ লাবন্য আমার নিচের দিকে মানে লুঙ্গির দিকে তাকাল৷আর তাকিয়েই দিল জোড়ে চিৎকার
—আআহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহ(লাবন্য)
–ওই কি হইছে?চিৎকার দিলা কেন?(আমি)
–আহহহহহহহহহহহহহহ
লাবন্য তখনও চিৎকার দিতেই লাগল৷আর তখনই নিচের দিকে তাকাতেই আমার মূখ থেকেও
–আহহহহহহহহহহহহহহ(আমি)

দুজনের মূখেই চিৎকার৷কারন আমার লুঙ্গি খুলে নিচে পড়ে গিয়েছিল৷
তখনই খেয়াল করলাম,আমার পরনে তো এখন প্যান্ট আছে!তো হুদাই চিল্লানি দিলাম কেন৷
লাবন্য তখনই আহহহ করেই রইল৷আর আমি তখনই ওর মুখে হাত দিয়ে ওর চিল্লানি আটকালাম৷
আর তাড়াতাড়ি লুঙ্গি আড়াল করলাম৷আর বললাম

–ওই এত জোড়ে চিল্লানি দিলা কেন?(আমি)
–আরে তোমাররররর লুঙ ,হি হি হি থাক বললাম না হি হি
তখনই লাবন্যর বাবা সহ অনেকেই উপস্থিত,সবাই জিজ্ঞাসা করতে লাগল ৷কি হয়েছে, কি বলব বুঝতেই পারছিনা৷লুঙ্গির কথা বললে তো মান সম্মান ভাঙ্গা প্লাস্টিক হয়ে যাবে৷আর তখনই একটা বুদ্ধি আসল,আর আমি বললাম

–আসলে হইছে কি?লাবন্য একটা টিকটিকি দেখে চিৎকার দিছে,আর আমিও ওর দেখাদেখি চিৎকার দিছি,তাই না লাবন্য(আমি)
–হি হি হি,হুম(মাথা নাড়িয়ে)
–ধুররর,এটা কোনো কথা হলো?তাই বলে আরমান তুমিও ওর মত,,,,,!আমি মেনে নিতে পারলাম না(লাবন্যর বাবা)
-আংকেল,আসলে বুঝেনই তো ,হঠাৎ এমন হলে………
–হুম তা ঠিক,আচ্ছা তাহলে আমরা যাই,
বলেই সবাই ,চলে যেতে লাগল৷
আর লাবন্য তখনও হাসতে হাসতে ভেংচি কেটে চলে গেল৷
রাগটা যে তখন কি পরিমান উঠেছিল৷আরেকটু হলে তো……..
থাক বাবা,কি বাঁচাটাই না বেঁচেছি৷
আর তারপরই বিছানায় শুয়ে রইলাম৷আর তখনও মনে মনে লুঙ্গি ড্যান্সই দিতে লাগলাম৷
যাক অবশেষে তাহলে লাবন্যকে চিরতরে পাবার বন্দোবস্ত হয়ে গেল৷
হি হি হি..
শুয়ে শুয়ে লাবন্যর কথাই ভাবতে লাগলা৷আর একটা গান গাইতে লাগলাম,
আহা কি আনন্দ আমার মনেতে,
আহা কি আনন্দ আমার মনেতে
কিছুদিন পরে উম্মাহ দীমু
লাবন্যর কপালে গালেতে .
আহা কি আনন্দ আমার মনেতে

তখনই বিছানাটা ভুমিকম্পের মত কাপতে লাগল৷
আরে ভুমিকম্প হচ্ছে? নাকি অতিরিক্ত আনন্দে ভুলভাল দেখছি?
তখনই খেয়াল করলাম বিছানায় একটা ফোন পড়ে আছে৷
ফোন টা হাতে নিয়েই
–আরে,এটা তো আমার ফোন না,,,লাবন্যর ফোন,তাহলে কি ভুলে আমার এখানেই রেখে গেছে?
আর তখনই দেখলাম ফেসবুক থেকে অনেক নোটিফিকেশন আসছিলো৷আর আমি কেন জানি ওর আইডিতে ডুকে গেলাম৷আর ওর প্রোফাইলে ডুকার পর দেখলাম অনেক কিছু পোষ্ট করা তবে সেগূলো অনলি মি করে রাখা৷
লেখাগূলো দেখে তো আমার হেব্বি রাগ উঠে গেল৷আর যখনই পড়া শুরু করলাম৷তখন তো আরও রাগ হলো আর মনটাই খারাপ হয়ে গেল৷আমি আস্তে আস্তে পড়তে লাগলাম৷
আর তখনই একটা পোষ্ট দেখে মনটাই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল৷কারন পোষ্ট টা ছিল এমন
,
“””বোকা রাজপুত্র!
কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি?কোথায় চলে গেলে?তুমি জানো?তোমাকে এখনও অনেক খুজে বেড়াই,আর তোমার সব স্মৃতিগুলো নিয়ে এখনও নিরিবিলি রাতে একা একা চোখের জল ফেলি,তুমি জানো,আমার বেষ্টফ্রেন্ড আরমানও আমাকে অনেক ভালোবাসে,আর আমি সেটা বুঝেও ওকে কিছু বলতে পারিনা৷বন্ধুত্বের আড়ালেই রেখে দেই৷কারন এই হৃদয়ে যে শুধু তোমার নামটাই লেখা আছে”””””

এই পোষ্ট দেখার পর বুকের বামপাশটা অনেক চিনচিনে ব্যাথা করছিলো,মনটা ভেঙে একদম চুরমার হয়ে গিয়েছিল৷কারন লাবন্যর মনে কি আমি তখনও ছিলাম না?ও অন্য একজনকে ভালোবাসে?ওর মনে তখনও অন্য কেউ?
এক ঝড় থেকে উঠতে না উঠতেই,আরেক ঝড় এসে মূখের হাসিগুলো কি এভাবে শেষ করে দিবে তারপরেই তো………

চলবে…………..

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *