তারপর দু’জনে সাদিয়ার মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম আমার বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে। বাস কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কেটে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।
কিছু সময় পরে বাস চলে আসলো। তারপর আমরা বাসে উঠলাম। বাসে উঠার পর দেখি আমাদের সিটে অন্য একটি মেয়ে বসে আছে। এটা দেখে আমি আমার কাছে থাকা টিকিট টা দেখতে লাগলাম। নাহ্ ঠীকই তো আছে।এটাই তো আমাদের সিট। তারপর আমি সেই মেয়েটিকে বললাম,,,,,,,,,,,,
আমিঃ এই যে আপু , এই সিটটা আমাদের।
মেয়েটাঃ কি বলেন এটা তো আমার সিট।
আমিঃ আচ্ছা আপনার টিকিট টা একটু দেখুন তো।
মেয়েটাঃ ওহ্ হ্যা এটাই আপনাদের সিট।(টিকিট বের করে)
আমিঃ তাহলে কষ্ট করে যদি আপনি আপনার সিটে যেতেন।
মেয়েটাঃ আসলে ভাইয়া আমার না পেছনে বসলে খারাপ লাগে যদি আপনি একটু কষ্ট করে আমার সিটটাতে গিয়ে বসতেন।
আমিঃ,,,,,,,,,,,,৷( চুপ করে ভাবছি কি করবো)
মেয়েটাঃ প্লিজ। আপনি আর না করবেন না। আর আপু(সাদিয়া) এখানে বসেন।
আমিঃ আচ্ছা ঠীক আছে। সাদিয়া,, (সম্পূর্ণ কথা বলতে না দিয়ে)
সাদিয়াঃ ঐ কিসের ঠীক আছে হ্যা। চুপ করে এখানে দারিয়ে থাকবে।একদম নড়বে না।
আমিঃ হায় হায় ও আবার এমন রেগে গেলো কেন।(মনে মনে)
সাদিয়াঃ আর এই আপনার সমস্যা কি। সেই কখন থেকে ভালোভাবে বলা হচ্ছে আপনার সিটে যাওয়ার জন্য শুনছেনই না।
মেয়েটাঃ,,,,,,,,,,,,।(মেয়েটা কিছু না বলে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।)
সাদিয়াঃ আর ও কেন আপনার সিটে গিয়ে বসবে। আপনি বোঝেন না যে আমরা স্বামী স্ত্রী তাহলে আলাদা কেন বসবো। আলাদা বসতে হলে তো আর পাশাপাশি সিট কাটতাম না। উঠুন বলছি।
মেয়েটা আর কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি তার সিটে ফিরে গেলেন। তারপর সাদিয়া জালনার কাছে গিয়ে বসলো। আমি ও আর কোন কথা না বলে ভয়ে ভয়ে বসে পড়লাম। বাসের ভেতর সকল মানুষ আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ও বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তখন সেই মেয়েটার দিকে তাকালাম দেখি সে কোথায় বসেছে। হুমম উনি উনার সিটেই বসেছে। সাদিয়ার যে ভাবে রাগি ভাবে কথা বলেছে সেতো একদম ভয় পেয়ে গিয়েছিল। পেছনে তাকানোর পর আমি যেই আবার সাদিয়ার দিকে তাকালাম দেখি সাদিয়া আমার দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে আছে।তার পর আমাকে বলে,,,,,,,,,,,
সাদিয়াঃ কি ব্যাপার পেছনে ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছিলে।(ভ্রু ভাচ করে)
আমিঃ ক কৈই কিছু নাতো।(ভয়ে ভয়ে)
সাদিয়াঃ আমি দেখলাম যে তুমি ঐ মেয়েটার দিকে তাকিয়েছিলে।
আমিঃ আরে না তুমি কি যে বলো। যার পাশে এত সুন্দর একটা বউ আছে সে কি করে অন্য মেয়ের দিকে তাকাবে।
সাদিয়াঃ হয়ছে আর পাম্প দিতে হবেনা।
আমিঃ আরে সত্যি বলছি।
সাদিয়াঃ নাও তুমি জানলার কাছে বসো।
আমিঃ সেকি তোমার না জানালার কাছে না বসলে খারাপ লাগে।
সাদিয়াঃ না এখন আর খারাপ লাগবে না। এখন এত কথা না বাড়িয়ে যা বলছি তাই করো।
তারপর আর কি করার আমি চুপ করে জানালার পাশে গিয়ে বসলাম। উফফ!! বাবা কি মেয়েরে। একটু পর সাদিয়া আমার কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমন্ত অবস্থায় ওর মুখটা দেখতে একদম মায়াবী লাগছে। জানালা দিয়ে আসা বাতাস ওর সামনে চুল গুলো ওর মুখে এসে পড়ছে। আমি আলতো করে সেই চুল গুলো সরিয়ে দিলাম। মন চাচ্ছে ওর দিকে এক মনে তাকিয়ে থাকি। ওর কপালে একে দিতে মন চাচ্ছে ভালোবাসার স্পর্শ। কিন্তু বাসের ভেতর বলে আর দিলাম না।
তারপর আমাদের বাড়িতে চলে আসলাম।
বাড়িতে আসার পর বাড়ির সবাই তাদের বউ নিয়ে ব্যাস্ত সাথে যে আমি আসছি সেদিকে কারো নজরই নেই। আরে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসছে সেদিকেও যে একবার নজর দিবে তানা করে সবাই সাদিয়া কে নিয়ে পড়ে আছে। আমি আর কিছু ভেবে না পেয়ে এক জায়গায় বোকার মত দারিয়ে আছি। একটু পর “মা” আমার কাছে এসে আমার কান ধরে বলে,,,,,
মাঃ এই বাঁদর ওর কাল রাতে আমাকে মিথ্যা কথা বলছিস কেন।(কান ধরে)
আমিঃ আআআআ মা লাগছে ছাড়ো।
মাঃ লাগবেই তো। শয়তান ছেলে একটা মায়ের সাথে মিথ্যা কথা বলা।
আমিঃ উফফ!! মা সবাই দেখছে তো।
মাঃ দেখলে দেখুক। আমার সাথে মিথ্যা কথা বলা বের করছি।( এই কথা বলে মারতে লাগলো।)
আর ওদিকে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সাদিয়া হেসেই চলছে। হাসা হচ্ছে তাইনা। হুমম আমিও দেখে নেবে।তোমার জন্য আমার মার খেতে হচ্ছে।
মাঃ যা এখম রুমে গিয়ে ফ্রেশ হো।
আমিঃ হুমম যাচ্ছি।
তার পর আমি আমার রুমে চলে গেলাম। গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে আছি একটু পর আমার বোন আসলো তারপর আমি তাকে বললাম,,,,,,
আমিঃ ঐ বুড়ি শোন।
সুলতানাঃ ভাইয়া তোমায় না বলছি আমাকে বুড়ি বলবা না।
আমিঃ বুড়িকে বুড়ি বলবো না তো কি বলবো।
সুলতানাঃ ধুর তোমার সাথে কথা বলে লাভ নাই। এখন বলো আমাকে কেন ডাকছিলে।
আমিঃ তোকে ডেকে ছিলাম একটা কথা বলার জন্য।
সুলতানাঃ কি কথা বলো। আমার হাতে সময় নেই। অনেক কাজ পড়ে আছে।
আমিঃ ঐ সময় নেই মানে কি এমন কাজ করিস হ্যা।
সুলতানাঃ বারে ভাবিকে আমার সব বুন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবেনা।
আমিঃ বাড়ির সবাই তো ভাবিকে নিয়ে পড়ে আছিস। তা তোর যে একটা ভাই আছে তার কথা কি তোর মনে নেই।
সুলতানাঃ ধুর তোমাকে তো সবাই চিনে।ভাবিকে তো আর কেউ চিনে না তাই ভাবির সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
আমিঃ হুমম এখন তো ভাবিই তোদের আপন আমি তো এখন পর হয়ে গেছি।
সাদিয়াঃ কে পর হয়ে গেছে হ্যা।
আমিঃ হয়ে গেলো এখন তো আর কোন কথাই বলা যাবেনা।
সুলতানাঃ এই যে তোমাকে নিয়ে বলে সবাই পড়ে আছে। তাই ভাইয়ার হিংসে হচ্ছে।
আমিঃ ঐ তুই থামবি। যা এখন এখান থেকে।
সাদিয়াঃ ও যাবে কেন। আমাকে দেখে হিংসে হয় তাইনা। এখন যাও তুমি বাইরে।
এই কথা বলে আমাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে। ভেতর থেকে দরজা আটকে দিলো। যাহ্ বাবা এটা কি হলো। ধুর ভালোই লাগে না আর। তারপর বাইরে এসে দেখি আমার কিছু বন্ধুরা আসছে।
সুমনঃ কিরে মাম্মা গেলে পড়তে আর এখন বিয়ে করে ফিরলে যে।
আমিঃ আরে এখন বিয়ে না করলে আর কখন।
মাসুমঃ তা মাম্মা ভাবিকে আমাদের দেখাবিনা।
আমিঃ আরে না দেখানোর কি আছে চল ভেতরে।
তারপর আমি আমার বন্ধুদের নিয়ে ভেতরে গিয়ে বসলাম একটু পর সাদিয়া আসলো। সাদিয়া কে দেখে আমার বন্ধুরা সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এটা দেখে আমি ওদের বলি,,,,,,,,,
আমিঃ ঐ সালারা মুখ বন্ধ কর তানা হলে মুখে মশা যাবে।
সুমনঃ দোস্ত ভাবি তো দেখতে একদম পরীর মত।
আমিঃ ঐ সালারা একদম নজর দিবিনা।
আমাদের কথা বলার মাঝে সাদিয়া আমাদের কাছে এসে আমার পাশে বসলো।
মাসুমঃ ভাবি কেমন আছেন।
সাদিয়াঃ জি ভালো। আপনারা কেমন আছেন ভাইয়া।
সুমনঃ ভাবি আমরাও ভালো আছি।
মাসুমঃ ভাবি আরমান আমরা কিন্তু সেই ছোট বেলার বন্ধু একটা কথা বলি মাইন্ড কইরেন না।
সাদিয়াঃ আরে না মাইন্ড করবো কেন বলুন কি বলবেন।
মাসুমঃ ভাবি আপনি এত সুন্দর। কি দেখে আমার বোকা বন্ধুটারে বিয়ে করলেন।(মজা করে)
আমিঃ ঐ সালা কি বললি আমি বোকা না। ঐ তোরা আমার বন্ধু নাকি ওর হ্যা।বেরো সালারা।
সুমনঃ আরে আরে রাগছিস কেন ওতো মজা করছিলো।
আমিঃ আমাকে অপমান করে কথা বলে মজা করা হচ্ছে তাইনা।
মাসুমঃ হাহাহা বন্ধু তুমি যে বোকা দেখলা তুমি নিজেই প্রমান করে দিলে।
এই কথা বলার পর সবাই হাসতে লাগলো। আর আমি চুপ করে বসে আছি। রাতে খাওয়া দাওয়া করে রুমে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছি এমন সময় ছোট বোন এসে হাজির,,,,,,,
সুলতানাঃ ভাইয়া ও ভাইয়া।
আমিঃ কি ব্যাপার দিনে তো একবারও এই ভাইয়ের কথা মনে পড়েনি তো এখন কেন মনে পড়লো।
সুলতানাঃ ভাইয়া আমর কিছু টাকা লাগবে।
আমিঃ তুই টাকা দিয়ে কি করবি।
সুলতানাঃ বারে তুমি যে বিয়ে করছো বন্ধুদের বলছিলাম ভাবিকে দেখার পর পার্টি দেবো তাই এখন তুমি টাকা দাও।
আমিঃ ভাবিকে দেখানোর জন্য পার্টি তাহলে তো এক টাকাও দেবো না।
সুলতানাঃ তুমি টাকা দেবেনা।
আমিঃ বললাম তো দেবো না এখন যা এখান থেকে।
সুলতানাঃ তাহলে আমিও দেখে নেবো তুমি কি করে টাকা না দাও।
আমিঃ তুই আবার কি দেখবি।
সাদিয়াঃ কি ব্যাপার যখনই দেখি ২ ভাই বোন ঝগড়া করো। কি হয়ছে।
আমিঃ কিছুনা তো।
সাদিয়াঃ তাহলে আমার এত মিষ্টি ননদের মুখটা এমন কালো হয়ে আছে কেন।
সুলতানাঃ কি ভাইয়া টাকা দেবে নাকি আমি ভাবিকে বলবো।
আমিঃ ঐ তুই আবার কি বলবি হ্যা।
সাদিয়াঃ কি কথা। তুমি আমাকে বলো। ও টাকা না দিলে আমি তোমাকে টাকা দেব।
সুলতানাঃ কি ভাইয়া টাকা দেবে নাকি দলটা চেঞ্জ করে ফেলবো।
আমিঃ হায় হায় ও আবার কি বলবে।কে যানে বানিয়ে বানিয়ে কি বলবে।তারপর তো আমি শেষ।
সাদিয়াঃ আরে তুমি ওর কাছে কেন শুনছো বলো কি বলবে।
সুলতানাঃ জানো ভাবি ভাইয়া না আমাকে ডেকে সাথী আপুর কথা জানতে চাইছে।
সাদিয়াঃ এই সাথীটা আবার কে(আমার দিকে তাকিয়ে)
আমিঃ আ আমি কি ভাবে বলবো।
সুলতানাঃ আরে ভাবি ভাইয়া স্কুলে যে মেয়েটা পছন্দ করতো তার নাম হচ্ছে সাথী।
সাদিয়াঃ কিহ্ বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরও অন্য মেয়ের খোজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
আমিঃ আরে নাহ্ ও মিথ্যা বলছে।
সাদিয়াঃ ও মিথ্যা বলছে আর তুমি খুব সত্যি বলছো তাইনা। সুলতানা এই নাও ১০০০ টাকা।
সুলতানাঃ আমার লক্ষি ভাবি।
সাদিয়াঃ আর তুমি বের হও এই রুম থেকে। অন্য মেয়ের কথা ভাবা হচ্ছে তাইনা।
এই কথা বলে আমাকে রুম থেকে বের করে দিলো।
সুলতানাঃ কি ভাইয়া আগেই যদি টাকা টা দিয়ে দিতে তাহলে তো আর এমন রুমের বাইরে দারিয়ে থাকতে হতোনা।
আমিঃ ঐ তুই কি আমার বোন নাকি আমার শত্রু।
সুলতানাঃ সেটা তুমি যা ভাবার ভাবতে পারো। এখন আমি এক মাত্র পারি তোমাকে এই বাইরে দারিয়ে থাকার হাত থেকে বাচাতে।
আমিঃ যা আমার লাগবেনা তোকে।
সুলতানাঃ হুমম বাবা যদি দেখে তুমি এভাবে ঘরের বাইরে দারিয়ে আছো তখন কি বলবে। আর ভাবিকে জিজ্ঞেস করলে তো ভাবি সব বলে দেবে। তখন তোমার কি হবে।
আমিঃ হায় হায় সত্যি তো আগেতো ভাবি নাই এই কথা। না না কেউ দেখার আগে রুমে ডুকতে হবে।(মনে মনে)
সুলতানাঃ কি ভাইয়া কি ভাবছো।
আমিঃ দেখ তুই না আমার লুক্ষি বোন হয়েস। তাহলে এখন তোর ভাবিকে সত্যি কথা বলে আমাকে এই বাইরে দারিয়ে থাকার হাত থেকে বাঁচা।
সুলতানাঃ এর জন্য যে আমাকে বকশিস দিতে হবে।
আমিঃ আচ্ছা। (কি আর করার রাজি হয়ে গেলাম)
সুলতানাঃ ভাবি ও ভাবি।
সাদিয়াঃ কি হয়ছে।(নরম শুরে)
সুলতানাঃ আসলে ভাবি একটু আগে তোমাকে যা বলছি সব মিথ্যে। আসলে ভাইয়া টাকা দিচ্ছিলো না তাই তোমার কাছে এমন বানিয়ে কথা বলছি তুমি প্লিজ ভাইয়া কে আর বাইরে দার করিয়ে রেখোনা।
সাদিয়াঃ আচ্ছা তোমার ভাইয়াকে পাঠীয়ে দাও।
সুলতানাঃ ভাইয়া যাও ভাবি তোমাকে ডাকছে।
তারপর আমি রুমের ভেতরে গেলাম। সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখটা লাল হয়ে আছে মনে হয় এত সময় দরজা আটকে কাঁদছিলো। আমি কাছে যেতে আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। তারপর আমি ওকে বললাম,,,,,,,
আমিঃ আরে তুমি কাঁদছো কেন।
সাদিয়াঃ যখন শুনলাম তুমি অন্য মেয়ের কথা জিজ্ঞেস করছো।যানো ঐ কথাটা শুনার পর আমি কি কষ্ট পেয়েছিলাম।
আমিঃ তার জন্য এভাবে কাঁদতে হয় নাকি।
সাদিয়াঃ কি করবো বলো তোমাকে যে আমার জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসি।
আমিঃ আমার এই সিনিয়র পাগলি বউটা বুঝি আমাকে এত ভালোবাসে।
সাদিয়াঃ হ্যা।
আমিঃ উমমমমাহ্। তাহলে এবার কান্না থামাও।(কপালে একটা চুমো দিয়ে)
সাদিয়াঃ হুমম। আর কাঁদবো না।(চোখ মুছতে মুছতে)
আমিঃ আচ্ছা তাহলে এবার চলো ঘুমাতে যায়।
তারপর আমি সাদিয়া ঘুমানোর জন্য বিছানায় গেলাম। সাদিয়া আমার বুকের উপর শুয়ে থাকলো। আমি ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পাইনি। সকালে ঘুমিয়ে আছি এমন সময় মনে হলো কে যেন আমার গায়ে এক বালতি পানি ঢেলে দিছে,,,,,,
আমিঃ ঐ কোন সালারে।(এক ফাল দিয়ে উঠে)
সামনের দিকে তাকিয়ে দেখি সাদিয়া বালতি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার মানে ও আমাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিছে। কিন্তু আমাকে এই সকাল বেলা ভিজিয়ে দেওয়ার কারণ কি।
আমিঃ এটা কি হলো। এভাবে ভিজিয়ে দিলে কেন।
সাদিয়াঃ আগে বলো ঘুমের মধ্যে কি স্বপ্ন দেখছিলে।
আমিঃ কেন।
সাদিয়াঃ ঘুমের ঘরে তুমি যেভাবে কোলবালিশ টাকে জরিয়ে ধরে মিট মিট করে হাসছিলে।
আমিঃ হাসছি বলে তুমি এভাবে ভিজিয়ে দেবে।
সাদিয়াঃ ঐ তুমি যেভাবে কোলবালিশ টাকে জরিয়ে ধরেছো এভাবে তো কোন দিন আমাকেও জরিয়ে ধরনি।
আমিঃ হায় হায় কি স্বপ্ন দেখছি আমার তো মনে নাই। আর ঘুমের ঘরে কোলবালিশ কে কিভাবে জরিয়ে ধরছি তাও তো খেয়াল নেই।(মনে মনে)
সাদিয়াঃ কি হলো এভাবে চুপ করে আছো কেন। বলো কোন মেয়েকে নিয়ে আবার স্বপ্ন দেখছিলে।
আমিঃ আরে তুমি কি বলো এসব। শীত করছিলো তাই তো এভাবে কোলবালিশ টাকে জরিয়ে ধরছিলাম।
সাদিয়াঃ ঐ আমাকে বোকা বানানোর একদম চেস্টা করবেনা।
আমিঃ কি বলো তোমাকে কি কখনও বোকা বানাতে পারি। তুমি হচ্ছ আমার লক্ষি বউ।
সাদিয়াঃ শোন আমি বেঁচে থাকতে তুই অন্য মেয়ের কথা ভাবা তো দুরের কথা তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখলেও আমি তোকে মেরে ফেলবো।(আমার মুখের সামনে এসে)
আমিঃ আমাই মেরে ফেললে তুমি কি বেঁচে থাকতে পারবে।
সাদিয়াঃ তোমাকে ছাড়াত বাঁচতে পারবো না তাই আগে তোকে মারবো পরে নিজে মরবো।
আমিঃ কাউকেই মরতে হবেনা। আমি বেঁচে থাকতে আমার এই লক্ষি বউটাকে মরতে দেবোনা।।
সাদিয়াঃ তাহলে তুমি আমাকে এত কষ্ট দাও কেন।
আমিঃ কোথায় কষ্ট দিলাম।সত্যি বলছি আমি কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখিনি। আর যদি দেখি তাহলে তোমাকে নিয়েই দেখবো।
সাদিয়াঃ হয়ছে এখন আর ভালোবাসা দেখাতে হবেনা।
আমিঃ তোমাকে ভালোবাসা দেখাবো নাতো কাকে দেখাবো শুনি।
এই কথা বলে একটান দিয়ে ওকে বুকে টেনে নিলাম।
সাদিয়াঃ ঐ কি করছো ছাড়ো বলছি।
আমিঃ এখন কেন ছাড়বো।
সাদিয়াঃ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আর এই ভিজে শরীর নিয়ে আমাকে একদম ধরবেনা।
আমিঃ তাহলে আমাকে ভিজিয়ে দিলে কেন।
সাদিয়াঃ কি করবো তোমাকে এত বার ডাকার পরও তোমার ঘুম ভাঙ্গার নামই নাই।তাই কোন উপায় না পেয়ে ভিজিয়ে দিলাম।
আমিঃ তাহলে এখন আমার সাথে তোমাকেও ভিজতে হবে।
সাদিয়াঃ ঐ সকাল সকাল সকাল একদম দুষ্টুমি না করে যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
তারপর আমাকে জর করে বাথরুমে পাঠিয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর মা আমাদের রুমে আসলো,,,,,,,
মাঃ বউমা কি করছো।
সাদিয়াঃ এইতো মা আপনার ছেলেকে ঘুম থেকে উঠিয়ে ফ্রেশ হতে পাঠালাম।
মাঃ শয়তান ছেলেটার বেশি ঘুমানোর অভ্যাস এখনও যায়নি।
সাদিয়াঃ না মা বরং আরো বেড়েছে।
মাঃ ও বউমা একটা কথা বলার জন্য এই সকালে আসা।
সাদিয়াঃ কি কথা মা বলুন।
মাঃ আরমানের কলেজ পড়াত শেষের পথে।এদিকে তোমার পড়া শেষ হতে আর কত সময় লাগবে।
সাদিয়াঃ কেন মা কি হয়ছে।
মাঃ আসলে আমি তোমাদের বাচ্চা নেওয়ার কথা বলছিলাম। তোমার শশুরের এখন নাতি-নাতনিদের সাথে খেলার খুব শখ জাগছে।
এই কথাটা শোনা মাত্র সাদিয়ার মুখ লজ্জায় একদম লাল হয়ে গেছে। ও আর কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে ফেললো।
আমিঃ কিহ্ বাচ্চা। কার বাচ্চার কথা বলছো তোমরা।(বাথরুম থেকে বেরিয়ে)
মাঃ অন্য কার বাচ্চার কথা বলতে যাবো।আমি তো তোদের বাচ্চার কথা বলছিলাম।
আমিঃ অ্যাঅ্যাঅ্যাঅ্যা। আমাদের বাচ্চার কথা বলছে। আমিতো নিজেই এখন বাচ্চা। আর তারপর যদি আমার বাচ্চা হয় লোকে কি বলবে।
সাদিয়াঃ ঐ তুমি বাচ্চা না। দু’দিন পর বাচ্চার বাবা হবে এখনও নিজেকে বাচ্চা বলা হচ্ছে তাইনা।
মাঃ দেখ আমাদের এখন বয়স হয়ছে। আমাদের কি শখ করেনা নাতি-নাতনিদের সাথে খেলা করতে।
আমিঃ এতই যখন নাতি-নাতনি শখ তাহলে একটা কাজ করো ইন্টারনেট থেকে নাতি-নাতনি ডাউনলোড করে নাও।
মাঃ ছিঃ কি বাজে কথা বলছিস আরমান।
সাদিয়াঃ মা আপনি এখন যান ওর সাথে আমি কথা বলছি।
মাঃ ঠিক আছে বউমা। হাঁদারাম টাকে একটু বুঝাও।
এই কথা বলে মা চলে গেলো। আর সাদিয়া গিয়ে দরজা আটঁকে দিয়ে এসে।আমার কাছে এসে আমাকে বলে,,,,,,
সাদিয়াঃ ঐ কি বললে বাচ্চা ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করবা তাইনা। তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন।(রাগি ভাবে)
আমিঃ আরে আরে না আমিতো মজা করে বলছিলাম। আর আমি কি তোমাকে বিয়ে করছি নাকি।তুমিইতে আমাকে জোর করে বিয়ে করছো। (ভয়ে ভয়ে)
সাদিয়াঃ কি বল্লি তুই আমি তোকে জোর করে বিয়ে করছি। আচ্ছা তাহলে এবার জোর করেই আমার বাচ্চার বাবা বানাবো। এখন বলো আমি মা কবে হবো।
আমিঃ সময় হলে হবে।(ভয়ে ভয়ে)
সাদিয়াঃ না আমি মা হতে চায়। তুই যদি আর একবার ও বাচ্চা না নিয়ার ব্যাপারে কোন কথা বলিস তোকে তো আমি।
সম্পূর্ণ কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। বাব্বারে কি দরজাল বউ রে। আপনারাই বলুন তো আমি নিজেই যেখানে বাচ্চা সেখানে আমি বাচ্চার বাবা হবো এটা ভাবতেই কেমন জানি লজ্জা করে।
১ বছর পর,
কলেজ শেষ করে সাদিয়ার জোরাজোরিতে ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। যদিও আমার ভর্তি হওয়ার কোন ইচ্ছাই ছিলোনা। পড়া লেখার পাশাপাশি বাবার কোম্পানি তে জয়েন করলাম। এখন কেমন জানি নিজেকে স্বামী স্বামী মনে হয় কারণ আমি যখন অফিস থেকে আসি সাদিয়া দৌড় দিয়ে আমার কাছে এসে আমার শার্ট খুলে দিতো।আবার অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে টাই পড়িয়ে দিতো। আমিও অফিসে যাওয়া সময় ওর কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিতাম।
একদিন অফিস থেকে এসে দেখি সবাই এক সাথে বসে আছে এবং আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে। কি ব্যাপার সবাই আমার দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে হাসছে কেন। আশেপাশে তাকিয়ে সাদিয়া কে খুজতে লাগলাম নাহ্ সাদিয়া তো এখানে নেই। তারপর আমি আমার মাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,,,
আমিঃ মা সাদিয়া কোথায়।
মাঃ উপরে রুমে আছে দেখ গিয়ে।(মিটমিট করে হাসতে হাসতে)
আমিঃ আশ্চর্য তোমরা সবাই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছো কেন। সেই আসার পর থেকে দেখছি।
মাঃ এমনি হাসছিলাম আমরা। যা বাবা তুই তোর রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়েনে।
আমিঃ ধুর তোমাদের যত ইচ্ছা হাসো। আমি গেলাম।(মনে মনে)
তাদের এই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে দেখে আমি লজ্জা পেয়ে উপরে আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে কোথাও সাদিয়া কে দেখতে পেলাম না। মনে হয় বাথরুমে গেছে কিন্তু না বাথরুমে তো কেউ নেই। তাহলে গেলো কোথায়। সাদিয়া কে কোথাও খুজে না পেয়ে আমি রুম থেকে বেরিয়ে এসে আবার মাকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,
আমিঃ মা সাদিয়া তো রুমে নেই।কোথায় গেছে ও।
আন্টিঃ বাবা তুমি ছাদে যাও ওখানে ওকে পাবে।
কি ব্যাপার এই রাতে আবার ও ছাদে গেলো কেন। ধুর এই পাগলিটাকে নিয়েও পারিনা।কখন যে কি করে নিজেও জানে না। তারপর আমি ও ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে সাদিয়া কে খুজতে লাগলাম ঠিক তখনই,,,,,,,,,,,,😲
চলবে……