পাশের বাসার মেয়ে যখন রোমান্টিক বউ পর্ব-০৫

— উম আরফান
বলে আমার বুকের উপরে শার্টটা খামচে ধরলো।
কিছুক্ষণ পর ঐশী ঘুমিয়ে পড়েছে, আর তারমধ্যে যে আমি কখন ঘুমিয়ে পড়েছি তা তো বুঝতেই পারিনি।

ভোর চারটা বাজতেই আলার্ম বাজা শুরু হয়ে গেলো, আমি তিরিং করে লাফিয়ে উঠে মোবাইলের আলার্ম অফ করে দিলাম যাতে ঐশীর কোনো ঘুমের ডিস্টার্ব না হয়।
আমি এবার ছাদে যেতেই দেখি আমার আব্বু আমার সামনে।
শালা মাইরালা আমার তো মনেই ছিলো না যে আব্বু প্রতিদিন ভোরে ছাদে চলাফেরা করে।
হায় আল্লাহ কি হবে এখন?
এটা ভাবতে ভাবতে আমি নখ চিবাচ্ছি, শালা আমি এখন ঐশীর ছাদে, আবার আমি এতো সকাল এখানে, এখানে কি আমি তো ৯ টার কমে বিছানায় ছাড়ি না
হঠাৎ আব্বু আমাকে দেখতে পেয়ে গেলো, আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে….
— আরফান তুই ঐশীদের ছাদে কি করস এখন?(আব্বু)
আমি তো পুরাই ভীতুর ডিম হয়ে গেছি এখন, না এখন ভয় পেলে হবে না ম্যানেজ করতে হবে।
আমি সোজা আমাদের ছাদে গিয়ে…..
— না আব্বু, আজ একটু ভোরে উঠে গিয়েছিলাম তো ঘুম আসছিলো না তাই ছাদে এসে দেখি ঐশীর ছাদে একটা পাখি উড়তে পারছিলো না।(আমি)
–- ওহ, আচ্ছা ঠিক আছে রুমে যা।*আব্বু)
–- আচ্ছা আব্বু।(আমি)
রুমে এসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে…
— আর নয় এই শেষ, ও আম্মু গো শালা কারোর বাসায় আর যাবোই না।(আমি)
চোখ গুলো ঢুলঢুল করছে তাই আমি আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।
কিছুক্ষণ পর আম্মু এসে…
— আরফান এই…(আম্মু)
— কি হইসে? (আমি)
— তুই না কাল রেদওয়ানের বাসায় ছিলি তাহলে এখানে কিভাবে এলি।(আম্মু)
— ও আম্মু ডিস্টার্ব করো না তো যাও না একটু ঘুমাতে দাও।(আমি)
— ওহ আমিও দেখছি কিভাবে তুই ঘুমাস।(আম্মু)
এটা বলে রুম থেকে যাওয়ার সময় পাখার সুইচটা অফ করে দিয়ে চলে গেলো।
ভাইরে পৃথিবীর কি সব বাপ মায়েরাই এক নাকি বলেন তো, তাড়াতাড়ি বিছানা না ছাড়লে শীতকালে পাখা চালিয়ে দেবে আবার গ্রীষ্মকালে পাখা বন্ধ করে দেবে। দেখুন এসব বন্ধ না করলে আমি কিন্তু এবার একটা আন্দোলন শুরু করে দেবো শালা এগুলা তো না ইন্সাফি

ভাইরে পুরো শরীর ঘেমে পুরা গোসল হয়ে গেছি তবুও বিছানা ছাড়বো না, শালা চোখ তো মানতেই চাইছে, অনেক কষ্টে তাদের বুঝিয়ে সুঝিয়ে খোলালাম
এবার বাইরে এসে ব্রেকফাস্ট করতে যাবো ঠিক তখনই….
— আরফানের আম্মু তোমার পোলার দেখি অনেক উন্নতি হইসে।(আব্বু)
— কি বলো আরফানের আব্বু? উন্নতি মানে? (আম্মু)
— না তোমার পোলা ভোরে ৩টায় উঠেছে আজ আবার নাকি ঐশীর ছাদে পাখি ওড়াতে গিয়েছিলো।(আব্বু)
— তা তো ভালো কথা, তাতে কি হইসে?(আম্মু)
— কি হইসে আরফানের আম্মু এখানেই তো ভেজাল।
ভাইরে ভেজাল কথাটা শোনার পরই যেন আমি কেমন শক খেয়ে গেলাম
— ভেজাল মানে?(আম্মু)
— আরফানের আম্মু তুমি চিন্তা করে দেখো অতো রাতে ও পাখি কনে পেলো। (আব্বু)
ভাইরে আমি সিউর আমি ধরা খেয়ে গেছি, এখন না খেয়ে উঠে যাওয়াটাই বেটার।
আমি এবার উঠতে যাবো ঠিক তখনই….
— এই আরফান বস, এখনো কথা শেষ হয়নি। (আব্বু)
আমি হেসেহেসে…
— হিহিহি, আব্বু আমি আবার তোমাদের মাঝে কেন?(আমি)
— তুমি না থাকলে যে আমাদের কথার উত্তরটাই পাবো না যে। (আব্বু মিষ্টি সুরে)
— ওহ তা বলো না কিসের উত্তর চাও।(আমি)
শালা আমি এখন এমন করছি যেমন ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানিনা
এবার আম্মু….
— ওহ আরফানের আব্বু ছাড়ো না, পোলাটারে খেতে দাও, তোমার চিন্তাভাবনা অনেক দূর, ছাড়ো তো।(আম্মু)
— আচ্ছা। (আব্বু)
যাক বাবা বাঁচা গেলো, আহ

এবার খাওয়া সেরে রুমে এসে পা দুলাচ্ছি শুয়ে শুয়ে। এমন সময় ঐশী আমার রুমে এলো…
ভাইরে আমি তো ওকে আসতে দেখে খুব ভয় পেয়ে গেলাম, আগে পেতাম না কিন্তু আজ পাচ্ছি।
আমি আস্তে আস্তে….
— ঐশী তুই এখানে কেন? (আমি চুপিচুপি)
— কি শুনতে পাচ্ছিনা। (ঐশী)
— বলছি তুই এখানে কেন এসেছিস?(আমি)
এটা শোনার পরই গাল গুলো ফুলিয়ে….
— এই তোমার কি? আমার হবু শ্বশুরের বাসায় আমি আসবো না তো কে আসবে শুনি?(ঐশী)
— ওহ সেটা নয়, আব্বুর কাছে আমি ধরা খেয়ে গিয়েছিলাম আর একটুর জন্য।(আমি)
— কবে?(ঐশী)
— আজ।(আমি)
— ধরা দিলে না কেন ভালোই তো হতো( ঐশী)
— ভালো হতো মানে?(আমি)
— মানে আমাদের সম্পর্কটা জানাজানি হয়ে গেলে আমাদের বিয়ে দিয়ে দেবে, আর আমার একদম তোমায় ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকতে ইচ্ছা করছে না।(ঐশী)
— এহহ ধরা পড়ে গেলে ভালো হতো(আমি)
— আচ্ছা বাদ দাও আম্মু কোথায়?(ঐশী)
— সেটা জানা লাগবে না।(আমি)
এটা বলে আমি আমার রুমে খিল দিয়ে দিলাম।
— আহ আরফান তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেন?(ঐশী)
— কই রাগছি না তো।(আমি)
— আরফান বাবু শোনো না (ঐশী)
— হুম বল..(আমি)
— বলছি বাবু চলো না একটু বাইরে দিকে যাই।(ঐশী)
— না আমার সময় নেই…(আমি)
— অ তা থাকবে কেন? (ঐশী)
এটা বলে রাগ দেখিয়ে আমার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো…
আমি ঐশীকে পিছন থেকে জড়িতে ধরে….
— আমার বৌটা বুঝি রাগ করেছে? (আমি)
— কে তোমার বৌ যে রাগ করবে? (ঐশী)
— ওরে বাবা আমার বৌটা দেখি সত্যিই রেগে গেছে।(আমি)
— না আমি রাগিনি।(ঐশী)
— আচ্ছা না রেগেছো তো একবার বল মিষ্টি করে ভালোবাসি আরফান (আমি)
— আরফান ছাড় আমাকে।(ঐশী)
— কেন ছাড়বো শুনি?(আমি)
— কেন ছাড়বি না হুম(ঐশী)
— ভালোবাসি যে।(আমি)
— হুন ভালোবাসার দরদ দেখাচ্ছে, আমার কোনো মান অভিমানের যার কাছে কোনো দাম নেই সে আবার ভালোবাসা দেখাই।(ঐশী)
— তাই নাকি, তা আমার দিকে একবার ঘোর (আমি)
— না।(ঐশী)
— আচ্ছা আমিই ঘুরিয়ে নিচ্ছি।(আমি)
এটা বলার সাথে সাথে আমি ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে…
— আমার দিকে তাকা।(আমি)
— ওকে।(ঐশী)

এটা বলে ঐশী আমার দিকে তাকালো, আমিও ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিতেই ঐশী হেসে উঠলো, মেয়েটার হাসিটা দেখলে মনটা খুব জুড়িয়ে যায়, মেয়েটা তো দেখতে পুরাই মাশাল্লাহ।
আমি এবার হেসেহেসে..
— ওই তোর নামে এবার দেখি পুলিশ কেস করা লাগবে?(আমি)
— কেন?(ঐশী)
— তোর হাসি দেখে বারে বারে ক্রাশ খাচ্ছি যে, বিনা টাকায় এতোবার এতো ভালো জিনিস কাউকে খাওয়ায়।(আমি)
— তাই নাকি?(ঐশী)
— জ্বি
ঐশী সোজা আমার কোলে উঠে…
— এই আরফান চলো না আমরা বিয়ে করে ফেলি (ঐশী)
— কেন আমাকে স্বাধীন দেখতে তোমার ভালো লাগছে না। (আমি)
— স্বাধীন মানে?(ঐশী)
— না এলাকার ভাইয়াদের কাছে শুনেছি নাকি বিয়ে করলেই সব পোলা অস্বাধীন হয়ে যায়।(আমি)
— বেশি বকো না, চলো না আজই বিয়ে করে ফেলি।(ঐশী)
— উফ পাগল নাকি তুই(আমি)
শালা এ কেমন মাইয়ারে ভাই, শুধুই বিয়ে আর বিয়ে।
— আরফান তোমায় ছাড়া ভালো লাগে না।(ঐশী)
— উম আগে কিভাবে কাটতো শুনি?(আমি)
— আগের কথা বাদ দাও।(ঐশী)
হঠাৎ দরজায় আম্মু জোরে জোরে নক দিয়ে….
— এই আরফান এই ঐশী তোরা এক রুমে কি করোস রে দরজা বন্ধ করে।(আম্মু)
ও ভাই মুজে মারো, এবার তো মনে হয় আমাকেই আমার জন্য সাড়ে তিন হাত কবর খুঁড়া লাগবে।
— কি কি কি কি আম্মু? (আমি)
— তোরা দুজন এক রুমে কি করস?(আম্মু)
— এই তো আম্মু নোট লিখতেছি।(আমি)
এটা শোনার পর ঐশী আমার ঠোঁটে ওর ঠোঁটে বসিয়ে দিয়ে…
— আন্টি ইম্পোরটেন্ট নোট দিচ্ছি এখন ডিস্টার্ব করো না প্লিজ।(ঐশী)
— এই কুত্তি ছাড় আম্মু দেখে নেবে।(আমি)
আম্মু এবার…
— আচ্ছা বেশ সব ভালো করে নোট দিস, পোলাটা দিন দিন যা হয়ে যাচ্ছে একটু দেখিস মা।(আম্মু)
— ও তুমি চিন্তা করো না, আজ থেকে তোমার পোলা আমার পোলা (ঐশী)
আম্মু শুনে..
— কি?
— না না, মানে ওই আর কি? তুমি যাও। (আমি)
— আচ্ছা।
এখনো আমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখেই আছে।
— এই এবার তো ছাড়, এবার কি আমার ইজ্জত নিবি নাকি?(আমি)
— হিহিহি, পারলে সেটাও নিয়ে নেবো। ওটা তো আরো বড় নোট(ঐশী)
— চুপ।(আমি)
কিছুক্ষণ পর ঐশী চলে গেলো। এবার আম্মু আমার রুমে এসে…
— কিরে সব নোট লেখা শেষ?(আম্মু)
— জ্বি আম্মু। (আমি)
আম্মু এবার হেসেহেসে….
— বাহ বাহ এতো সুন্দর নোট দিয়েছে যে তোর গালে দেখি লিপস্টিকের রং তা লিপস্টিকের রং দিয়ে কি লেখালেখি করছিলি কেন?(আম্মু)
ভাইরে এটা শোনার পর যে আমার কি পরিমান লজ্জা করছে, শালা শেষে ধরাই খেয়ে গেলাম আমি সাথে সাথে হাতে করে গাল গুলা মুছতে লাগলাম।
— না না নাহ আম্মু হয়েছে কি?(আমি)
— থাক আর মিথ্যা কথা বলা লাগবে না, যা গোসল সেরে নে।(আম্মু)
— আচ্ছা আম্মু।

এটা বলে আম্মু চলে গেলো।
আমার এখনো প্রচুর লজ্জা করছে আমি আয়নার সামনে যেতেই দেখি আমার পুরো মুখ তো লাল লিপস্টিকের রং এ ভরে গেছে শালা তাড়াতাড়ি ধুয়ে না ফেললে দেখি আব্বু দেখে নেবে, আর না দেখলেই বা কি সেই তো আব্বুর কানে কথা চলে যাবে।
লাঞ্চ করার সময় আমি বসে আছি, আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে…
— ওগো শুনছো তোমার পোলার নোট নেওয়া ভালোই চলছে, এবারে মনে হয় বেশ বেশি % পেয়েই পাশ করবে।(আম্মু)
এই খেয়েছে, আব্বুর জুতা পেটানি তাহলে আজ ভাতের বদলে।

নেক্সট পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন সবাই আগামীকালকে নেক্সট পর্ব দেওয়া হবে

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

More From Author

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *