— আরফান আরফান এই আরফান উঠো না। (ঐশী)
আমি ঘুম ঘুম চোখে…
— হুম বল কি হইসে?(আমি)
— এই কি হইসে মানে কি? ওঠো বলছি।(ঐশী)
— আচ্ছা উঠছি তুই এখন যা।
— আচ্ছা, তাড়াতাড়ি উঠবা কিন্তু, আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করছি।
— হুম।
ঐশী চলে যাওয়ার পরেই আমি পা ছুঁড়ে আবার চোখ বন্ধ করে দিলাম।
কিছুক্ষন পর কে যেন আমার গায়ে লাফিয়ে উঠে বসলো আমি সাথে সাথে…
— এই কোন কুত্তার বাচ্ছা রে।(আমি)
এটা বলে চোখ খুলতেই দেখি রেদওয়ান।
— মাম্মা কাল রাতের এখনো দেখি ডোজ কাটেনি।(রেদওয়ান)
— এই শালা তুই আগে আমার উপর থেকে নেমে বস, কুম্ভকর্নের মতো চেহারা নিয়ে আমার উপরেই উঠতে হলো।(আমি)
— আবে চুপ, চল ভাই সিগারেট খাইতে যাই আমার কাছে একটাও নাই।
— আচ্ছা চল।
এবার আমরা ছাদে এসে সিগারেটের টান দিতে লাগলাম,
— আচ্ছা রেদওয়ান।
— হুম বল..
— দোস্ত এটা কি করা ঠিক হচ্ছে?
— কোনটা?
— এই যে আমি আর ঐশী এক সাথে আছি, আমাদের এখনো বিয়ে হইনি।
— তাতে কি হইসে?
— না এটা কেমন লিভিং এর মতো হয়ে যাচ্ছে তাই না।
— আব্বে ওসব কিছু না, বাসা থেকে যতোদিন না মানছে ততদিন এক সাথেই থাক।
— না দোস্ত এটা ঠিক করছি না আমি, কিছুদিন পর মহল্লার মানুষজন জানতে পারলে আমার আব্বু আম্মু আর ঐশীর আব্বু আম্মুর দিকে আঙুল তুলে কথা বলবে আর সেটা আমি চাই না।
— সেটাও ঠিক, ভেবে দেখ কি করবি।
— আমি ভাবছি আজই বাসায় চলে যাবো ঐশীকে নিয়ে, আর একবার বুঝিয়ে দেখবো যদি মানে ত ভালো নইতো কিছু করার নেই।
— আরে আরফান তুই পাগল নাকি মেয়েটা তোকে জানের মতো ভালোবাসে।
— দেখ ভাই ভালোবাসা থাকলেই সব কিছু হয় না, আর এটা সারাজীবনের পাওয়ার একটা ব্যাপার, সেখানে কাউকে দুঃখ দিয়ে খুশি হওয়া যাই না।
— জ্বি ভাই এটা তুই ১০০% সঠিক কথা বলেছিস।
— চল চল, ঐশী ব্রেকফাস্ট রেডি করে হইতো অপেক্ষা করছে।
— ওকে চল
এবার আমরা ব্রেকফাস্ট সেরে বাসার দিকে রওনা দিলাম, বাসাতে আসতেই আম্মু আব্বু আমাকে ডেকে পুরাই জ্বলে আগুন। আমি আব্বু আম্মুকে শান্ত করে আমি আর ঐশী বাসায় ঢুকলাম। এবার সবাই মিলে একসাথে বসে….
— আরফান কি হচ্ছে এসব? (আব্বু)
— আব্বু বোঝার ট্রাই করো। (আমি)
— আরে আমি কি বুঝবো, দুদিন পর মহল্লার লোকজন আমাদের দিকে আঙুল তুলে কথা বলবে সেটা হইত তুই চাস না।
— জ্বি আব্বু একদমই না। তার জন্যই তো জান্নাতকে নিয়ে বাসায় এলাম।
— দেখ নাঈম তুই এখন বড়ো হয়েছিস যেটা করবি সেটা ভেবে করিস।
— জ্বি আব্বু।
ঐশী এসব ঝগড়া ঝাঁটি দেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আমার আম্মু ওকে নোটিশ করলো…
— এই ঐশী তুই কাঁদছিস কেন? (আম্মু)
— আন্টি আজ আমার জন্য আপনাদের সবার এভাবে অপমানিত হতে হচ্ছে। (ঐশী)
— না মা অপমানিত হবো কেন? আমরা জানি তো তোরা একে অপরকে কতোটা ভালোবাসিস।(আম্মু)
— প্লিজ আন্টি আমার আব্বু আম্মুকে একটু বোঝান, আমি সত্যিই আরফানকে ছাড়া বাঁচবো না।(ঐশী)
এটা বলে আমার আম্মুকে জড়িয়ে কান্না করছে।
আমার আম্মু এবার ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে….
— হুম মা, আমরা বোঝানোর ট্রাই করবো।
হঠাৎ দরজায় কে যেন নক করছে, আমি গিয়ে খুলতেই দেখি ঐশীতের আব্বু। সোজা আমার জামার কলার ধরে…
— এই পোলা তোর এতো বড়ো আস্পর্ধা তুই আমার মেয়েকে নিয়ে পালাস, বল আমার মেয়ে কোথায়?(ঐশীর আব্বু)
ঐশীর আব্বুকে এভাবে রিয়েক্ট করতে দেখে আমার গলার পানী শুকিয়ে গেলো…
— আঙ্কেল আপনি শুনুন প্লিজ…
ঐশী আমাকে এভাবে দেখতে পেয়ে আমার দিকে ছুটে এসে….
— আব্বু আরফানকে ছেড়ে দাও। (ঐশী)
— ওহ তুইও এখানে আছিস চল বাসায় চল।
এটা বলে ঐশীর হাত ধরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে লাগলো….
ঐশী ওর আব্বুর কাছে জোরে জোরে চিৎকার করে…
— আব্বু প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও, প্লিজ আব্বু।
আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, আমি ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছি একভাবে। ঐশী দেখি এবার জোর করে ওর আব্বুর হাত ছাড়িয়ে চিৎকার করে…..
— কি বলছি শোনা যাচ্ছে না, আমি আরফানকে ছাড়া থাকতে পারবো না, তুমি কি চাও আমি সুইসাইড করি। আব্বু তুমি আমায় চেনো আমি যেটা চায় সেটাই আমার লক্ষ একমাত্র। আব্বু প্লিজ আমাকে আরফান দিয়ে প্লিজ আব্বু। আমি মরে যাবো ওকে না পেলে প্লিজ আব্বু। প্লিজ।
ঐশীর আব্বু ঐশীর গালে একটা থাপ্পড় মেরে….
— বাহ ঐশী বাহ, আজ তোকে ২২টা বছর বুকে আগলে রেখে মানুষ করলাম সেখানে আমাদের ভালোবাসার থেকে এই তোর দুইদিনের ভালোবাসার দাম বেশি বাহ। এই না হলে তুই আমার মেয়ে।
ঐশী ফুঁপিয়ে কান্না করছে, আমি যেতে পারছি না কারন আমি এখন পর ঐশীর আব্বুই এখন সব।
ঐশী এবার ওর আব্বুকে জড়িয়ে….
— আব্বু আমি তোমাদের অনেক ভালোবাসি তবে আমার সুখটা ছিনিয়ে নিও না প্লিজ। আমি তোমার পায়ে পড়ছি প্লিজ।(ঐশী কান্না করতে করতে)
ঐশী একভাবে কান্না করেই যাচ্ছে, আমার এটা দেখে আর সহ্য হলো না, আমি কান্না শুরু করে দিলাম। ঐশীর আব্বুর কাছে গিয়ে…
— আঙ্কেল আমি আপনার কাছে আমার ভালোবাসা ভিক্ষা চাইছি প্লিজ আঙ্কেল আমাকে ফিরিয়ে দেবেন না, আমরা দুজন একে অপরকে সত্যিই খুব ভালোবাসি। প্লিজ আঙ্কেল।
ঐশীর আব্বু নিজেই কেঁদে ফেললেন এবার।
আর বলতে লাগলেন…..
— আমি কতো বড়ো বোকা, আমি আমার মেয়ের সুখ নিয়ে এতোক্ষন খেলছিলাম।(আঙ্কেল)
আমি আর ঐশী একথা শুনে অবাক হলাম।
— মানে? (আমি)
— মানেটা হলো আমি এই দিনেরই অপেক্ষা করছিলাম, আমার মেয়েটাকে যে ছোট্ট স্বপ্ন দেখিয়ে অনেক খুশিতে রাখবে। তোমাদের এত ভালোবাসার মাঝে আমি যদি আজ দাঁড়াও আল্লাহ আজ আমাকেও মাফ করবে না।
এটা শোনার পর আমি নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা।
সাথে সাথে ঐশীর আব্বুকে জড়িয়ে…
— আঙ্কেল অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আঙ্কেলকে ছেড়ে এবার আমি জান্নাতকে জড়িয়ে ধরতেই আঙ্কেল আমাকে টেনে নিয়ে…
— একটু হলেও তো লজ্জা করো সামনে গুরুজন দাঁড়িয়ে আছে।
এটা শোনার পর আমি লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলাম সাথে ঐশীও
— সরি আঙ্কেল।
ভাইরে এতোটাই খুশি যে আমি আমাকে কে রাখে।
ঐশীর আব্বু এবার চলে গেলো আর বলে গেলো…
— ঐশী মা আমি খুবই গিলটি ফিল করছি মাফ করে দিস আমি বুঝতে পারিনি।
এটা বলে চলে যাওয়ার কারন হয়তো সে নিজেকেও মাফ করতে পারছে না।
এবার আমরা দুজনে বাসার ভেতরে আসতেই আমার আম্মু আব্বুকে ঐশী সালাম করলো।
আমার আম্মু আব্বু হেসেহেসে…
— তাহলে ছোটো গিন্নি পেয়েই গেলাম। (আব্বু)
— মানে? (আমি)
— তোর আম্মু বড়ো গিন্নি আর তোর বৌ তো এ বাসার ছোটো গিন্নি।
ঐশী এবার আমার আব্বুর কাছে গিয়ে….
— জ্বি আঙ্কেল, এবার বিয়ের দিনটা পাকা করুন আপনারা।
এটা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম, ধুর মেয়েটার কি একটুও সরম নাই নাকি আব্বুকেও বলে দিচ্ছে।
ঐশীর কথাটা শুনে আব্বু…
— জ্বি মা।
এবার আমাদের বিয়ের দিন ঠিক করা হলো,
আমার বিয়েতে পাঠক ভাইয়ারা আপনারা আসবেন কিন্তু।
আজ আমাদের বিয়ে আর আমরাই এখনো রেডি হইনি, সারাদিন রুমের ভেতরে আছি। সেটা জানে আমার আব্বু আর আম্মু আসলে আমি তো আছি ঐশীর রুমে।
ঐশী আমায় অনেক আগেই বলে দিয়েছে এখান থেকে যেতে, কারন ওর অনেক আপু আর ফ্রেন্ড সবাই বসে আছে রুমেতে। সবাই আমার সাথে হাসি ঠাট্টা করছে আর আমিও তাদের তাল মিলিয়ে হেসেই চলেছি।
এটা দেখে ঐশী দেখছি একভাবে রেগে বসে আছে, আবার আমার কাছে এসে…
— এই ছাদে চলো? (ঐশী)
— কেন? (আমি)
— যেতে বলেছি
— আচ্ছা যাচ্ছি যাচ্ছি এতো রাগ দেখানোর কি আছে শুনি
আমাকে ধমকে ছাদে নিয়ে এসে…
— এই তোমায় বলেছি না বাসায় যেতে। (ঐশী)
— এই তো যাবো তো এবার। (আমি)
— কখন যাবা? মেয়ে দেখা কি এখনো শেষ হয়নি নাকি?
ওহ তাহলে মহারানীর এজন্য গাল ফুলিয়ে বসে থাকা হয়েছিলো।
চলো আর একটু রাগিয়ে দেওয়াই যাক
— মেয়ে দেখা বলতে আচ্ছা কোন মেয়েটা বলতো?
— কোন মেয়েটা হুম।
— সত্যি বলছি মেয়েগুলা না জাস্ট অসাম দেখতে।
— যা না কুত্তা যা প্রেম কর ডেকে দেবো।
মেয়েটা যতো রাগছে ততোই মায়াবী লাগছে, একটা শাড়ি পড়ে আছে হলুদ রঙের বেশ মানিয়েছে।
— না না প্রেম করার জন্য তো তুই আছিস তাই না।
— ওহ তারমানে বিয়ে করবি তার জন্যই অতোক্ষন বসে সিলেক্ট করছিলি তাই না।
— না না, বাবু শোন না।
— এই আমাকে একদম বাবু বলবিনা।
— আচ্ছা আমার আদরের বৌ।
— না আমি তোর কেউ না।
— আচ্ছা আমার অনুর আম্মু।
— না আমি না অন্য কেউ।
আমি ঐশীর রাগ ভাঙানোর জন্য ঐশীকে জড়িয়ে ধরলাম, দেখি ঐশী এখনো রেগে আছে আমাকে ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, আমি ঐশীর কাধে মাথা রাখতেই ঐশী হাউ হাউ করে কেঁদে উঠলো আর আমার পিঠে কিল ঘুশি দিয়ে…
— আমাকে তোমার রাগাতে অনেক ভালো লাগে তাই না। (ঐশী)
— হিহিহিহি, ওই পাগলি রাগ করিস না তুই তো আমার সব। তোকে রাগাবো না তো কি করবো।(আমি)
— হুম জানি তো তার জন্যই তো আমাকে কান্না করাও।
— এই বাবু তোকে না আজ পুরাই আমার স্বপ্নে দেখা বৌ বৌ লাগছে জানিস তো।
ঐশী ভ্রু কুঁচকে….
— স্বপ্নে মানে অন্য কেউ ছিলো নাকি?
— দূর কি যে বলিস না, তুই তো আমার স্বপ্ন, তোকে নিয়েই তো আমি হাজার স্বপ্ন বুনি।
— উম, থাক আর পাম দেওয়া লাগবে না।
— পাম দিলে ফুলে ফেটে যাবি যে তার জন্য আমি পাম দেয় না।
— আচ্ছা বাবু শোনো না আমার না কাপড় পড়ে থাকতে অনেক অসুবিধা হচ্ছে কি করবো বলোতো।
— বাবু আজকের দিনে তো কাপড় পড়তেই হবে, একটু কষ্ট করে আজকের দিনটা অন্তত আমার জন্য।
— হিহিহি, সব খানেই আমার জন্য।
এটা বলে আমার গাল টানতে লাগলো।
— ওই লাগে তো।
— হুম লাগবেই তো, আগে তো গালে একটুও মাংস ছিলো না এখন দেখছিস কতো গোল গোল হয়ে গেছে বেশ টানতেও মজা লাগছে সব হলো
পুরো কথাটা না বলতে দিয়ে…
— থাক তোকে আর বলতে হবে না আমিই বলে দিচ্ছি, সবই আমার চুমুর কামাল।
— হিহিহি পাগল একটা।
আমরা দুজনে পাগলের মতো হাসাহাসি করে কথা বলছি।
ভাই আজকের দিনটা কার না স্মরনীয় থাকবে না বলুন আজ আমার বিয়ে তাও আবার আমার ভালোবাসার মানুষটার সাথে।
এমন কেউ আছেন যে ভালোবেসে তার ভালোবাসার মানুষটাকেই সারাজীবনের মতো করে পেয়েছেন থাকলে কমেন্ট বক্সে একটা কমেন্ট ড্রপ করুন।
ছাদের ওপাশ থেকে আম্মু এসব দেখে….
— ওইইইইইইই আরফান তোরা কি এভাবেই কথা বলতেই থাকবি না বিয়ের পর্ব সারবি, তুই তো বৌ পাগল হয়ে গেলি দেখছি যে। (আম্মু চিৎকার করে)
ঐশী হেসে..
— ওই বৌ পাগল যাও এবার আম্মু ডাকছে (ঐশী)
— আচ্ছা।
— ওই শোনো না একটা কিস দাও।(ঐশী)
— আবে তুই পাগল নাকি আম্মু আছে।
— হিহিহিহি, এই রুমে গিয়ে ফোন দিবা।
— ওকে।
শালা এতো মহা মুশকিল মাত্র কয়েক ফুট দূরত্বে আমাদের দুজনের বাসা তবুও মহারানীকে ফোন দেওয়া লাগবে।
এবার আমি আম্মুর কাছে যেতেই…
— এই তোর এতোটুকু রেসপন্স নেই যে আজ তোর বিয়ে, বাসায় এতো মেহমান তোর আব্বু কতো দিকে সামাল দেবে শুনি।(আম্মু)
— আচ্ছা আম্মু চলো।
— পুরাই বৌ পাগলা হয়ে গেলি।
আমার মুখ ফসকে…
— আম্মু এই তো শুরু, গেম ওভার হতে অনেক দেরি।
আম্মু শুনে কিছুটা লজ্জা পেয়ে…
— খুব বৌ চাই তাই না। পাজি পোলা একটা।
— হিহিহি, আম্মু নানি আইছে।
— হুম।
— ওরে আম্মু তুমি তো দেখি আরেকটা বৌমাও পেয়ে যাচ্ছো সাথে।
— চুপ ফাজিল, চল চল তোর আব্বু ক্ষেপে আছে তোর উপর।
— আচ্ছা চলো।
কালকে শেষ করে দিবো গল্প টা