মাথাটা নিচু করেই রাখলাম৷কি করব বুঝতেই পারছিনা৷চোখ দিয়ে পানি টপটপ করে বের হচ্ছিলো৷আর তখনই বাকি পোষ্টগূলো দেখার সিদ্ধান্ত নিতেই আইডিতে আবারও ডুকলাম আর তখনই চোখ দুটো আসমানে উঠে গেল৷মনের ভিতর কৌতুহল টা বেড়ে গেল৷কারন
হঠাৎ ই ওর আইডির নাম টা চোখে পড়ে গেল৷আর আইডির নাম হলো মিম চৌধুরী৷তখন তো আরও অবাক হয়ে গেলাম৷কারন এই নামের আইডি থেকেই তো আমার আইডিতে হাজার হাজার মেসেজ এসেছিল৷তখনই ওর মেসেজ গুলো দেখার জন্য মেসেজ লিষ্টে যেতেই আমার চোখ যেন ওপরে উঠে গেল৷কারন এই, সেই মিম যাকে আমি আমার জীবনে লাবন্য নামেই চিনি৷
তখন তো মনের সব ভয়ভীতি চলে গিয়ে ,লুঙ্গি ড্যান্স দেওয়ার জন্য মনটা আনচান আনচান করতে লাগল৷এবার দরজাটা দিয়েই লুঙ্গি ড্যান্স দেওয়া শুরু করলাম৷
আল্লাহ তুমি, আমার জন্য এত ভালো কিছু একটা রেখে দিছো,বুঝতেই পারিনি,এবার ওর পোষ্ট গুলো দেখা যাক৷তাই আবারও ওর পোষ্টে ডুকলাম৷
আর আবারও একটা পোষ্ট পড়তে লাগলাম
,
“””বোকা রাজপুত্র! তুমি কোথায়?জানো তোমার জন্য না ,খুব কষ্ট হয়,তোমাকে যদি একটাবার দুচোখ ভরে দেখতে পারতাম?তোমার বুকে যদি একটু মাথা রাখতে পারতাম?
তখনই মনে মনে বলতে লাগলাম,””এহহহহহ
হহহহহ সারাদিন এক সাথেই থাকি আর একটাবারও তো বললে না আরমান!তোমার বুকে মাথা রাখতে খুব ইচ্ছে করে,তোমাকে মন ভরে দেখতে মনটা আনচান করে৷পরক্ষনেই মনে হলো তো আর জানে না,
‘বোকা রাজপুত্র” আইডিটা আমার আইডি৷যেটাতে আমি শুধু গল্প লিখি৷আর সবাই জেনে নেন ‘বোকা রাজপুত্র’ওইটা আমারই আইডি৷কিন্তু কোনো পিক দেওয়া নেই৷
শুধু গল্প লিখতাম ওইটাতে৷
তখন আবারও ওর পোষ্ট পড়া শুরু করলাম,
.
“”জানো! বো…পুত্র দুর..শুধু রাজপুত্র বলব!তোমাকে তো আমি কখনোই দেখিনি, তবে মনের চোখ দিয়ে তোমায় অনুভব করি,তুমি দেখতে কেমন?
–এহহহহহহহহ মনের চোখ দিয়া অনূভব করে?সামনে থাইকাও দেখে না,আবার মনের চোখ???(মনে মনে)
আবারও পোষ্টগুলো পড়তে যাবো,তখনই
—ঠক ঠক ,,ঠক ঠক(মানে দরজায় টোকা দিচ্ছে আর কি)
তখনই ওর ফোন থেকে ফেসবুক লগ আউট দিলাম আর বিছানার একটা চিপা জায়গায় ফোনটা রেখে দিলাম৷আর এমন একটা ভাব নিলাম,যেন ওর ফোনই আমি চিনিনা৷আর দরজা খুলতে গেলাম৷দরজা খুলতেই
–এত দেড়ি করলা কেন(লাবন্য)
–আসলে ঘুমিয়ে পরছি তো,(একটু মিথ্যা বললাম)
–ওহ ভালো
–হুম ৷কিছু বলবা লাবন্য?
–হুম৷আসলে আমার ফোনটা যে কোথায় রাখলাম৷বুঝতেই পারছিনা
–হুম৷তো ভালো করে খুজে দেখো কোথায় রাখছো?(না জানার মত)
পুরো রুম খুজা শুরু করল৷আর আমিও হুদাই খুজতে লাগলাম৷আসলে লাবন্যও আমাকে ভালোবাসে৷এটা জেনে তো একদম ভালোবাসা পাগলা হয়ে গেলাম৷ ৷হি হি মজাই মজা৷এবার তো মনে লাড্ডু ফুটতাছে৷কি যে খুশি লাগতাছে ,বুঝাতে পারমু না৷আমি ফোন খুজার নামে লাবন্যর ওই মায়াবী চেহারার দিকে একটু পর পর তাকাতাম৷যেন ও বুঝতে না পারে৷আর লাবন্যকে এখনই বুঝতে দিমু না৷ওর সাথে একটু মজা করমু৷আমার মত একটা কিউট পোলা থাকতে একটা অচেনা ,ফেসবুকের ছেলেকে না দেখেই প্রেম?আর এই দিকে আমি কষ্ট পাইয়া মরি৷আর ওনি জেনেও আমার ভালোবাসার মুল্য দিলো না যে আমি ওকে ভালোবাসি৷ওনি আছে ফেসবুকের রাজপুত্র নিয়া!যে নাকি বোকা😁 হুমমমমম৷
এখন ওর সাথে ফেসবুক দিয়াই কয়দিন প্রেম করমু৷আর আমাকে কষ্ট দেওয়ার প্রতিশোধ নিমু৷আর সারপ্রাইজ দিয়া তারপর সমুদ্রের প্রকৃতির সামনে ওরে প্রপোজ করে মনের আশা পুর্ণ করমু৷ হি হি হি৷তারপর আবারও হুদাই ফোন খুজা শুরু করে দিলাম৷আর লাবন্যর অগোচড়েই সেটা বিছানার ফাকে লুকিয়ে রাখলাম৷ হি হি
অনেক্ষন পর বিছানার চিপার ফাক থেকে ফোনটা বের করে ওর হাতে দিলাম৷
–ওপসসস আরমান!,আমার ফোনটা খুজে দেবার জন্য,কি বলে যে তোমাকে ধন্যবাদ দিবো?
–আরে ধন্যবাদ না দিলেও চলবে ,শুধূ একটা উমমমমমাহহহ দিলেই হবে(ভির ভির করে)
–ওই কি বললা?
–কই কি বলছি,আসলে আবেগের ঠেলায়,কি বলতে কি বলে ফেলছি বুঝতেই পারিনি
–আবেগের ঠেলা মানে?
-তুমি ওইটা বুঝবা না
–তুমি আবেগ দিয়া আর যা দিয়াই বলো,এখন বলো,, কি বলছো(রেগে)
–আমি তো বললাম আমাকে ধন্যবাদ দিতে হবে না৷এমনিতেই হয়ে যাবে
আর তখনই লাবন্য হঠাৎ কেমন করে জানি হকচকিয়ে গেল৷আর বলে উঠল
–ওই ওই,একটা কথা!আমি তো তোমার বিছানার এই পাশে একটু দাড়িয়েছিলাম মাত্র৷তো আমার ফোন তোমার বিছানার ওই পাশে থাকবে কেন?আর ফোন ওই চিপায় যাবে কিভাবে?
–এই রে,মনে হয় ধরা খাইছি(ভিরভির করে)
–ওই কি বলছো?আমার ফোন কি তুমি লুকাইছো?.
-আরে না,তোমার ফোন নিয়া আমি কি করমু?আর আমার তো কিছুই করার নেই৷তাই না?
–সেটা তো আমি জানিনা৷তুমিই আমার ফোন লুকাইছো?কোনো কিছু ডিলেট করে দাও নি তো?
–আরে আমি তো ফোনই হাতে নেইনি৷ডিলেট করব কিভাবে?
–দাড়াও দাড়াও দেখছি৷কী করছো তুমি
–কি আর দেখবেই?বুঝতে পারলে তো?(মনে মনে)
লাবন্য ফোন হাতে নিয়ে দেখা শুরু করল৷
মুখটা হাসিখুশিই৷হঠাৎই আমার মুখটা চুপসে গেল৷যখন মনে হলো ফেসবুক তো ও লগ ইন করে রেখেছিল৷আর আমি লগ আউট করে দিছি৷চিন্তায় পড়ে গেলাম৷এইটা যদি বুঝতে পারে ৷তাহলে তো আমাকে ধরেই ফেলবে যে,আমিই ওর ফোন ধরেছি৷
আল্লাহই বাচাইও৷
আর তখনই লাবন্য দেখলাম হাসিমুখেই বলল
–যাক,কোনো কিছুই কাটোনি৷আর ফোনও ধরোনি৷তবে বুঝলাম না কিভাবে ওই কর্নারে গেল
–আরে,কি ভুলভাল কথা বলছো৷
–হুম৷আচ্ছা আমি তাহলে যাই
–হুম
তখনই লাবন্য চলে গেল৷আর আমি আরেকটু খুশিতে একটা লাফ দিলাম৷কিন্তু লাফ দিয়েই ফ্লোরে পড়ে হা করেই রইলাম৷কারন লাবন্য আবার আমার রুমে আসছে
–তুমি আমার ফোন ধরোনি?
(রেগে মাথাটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে)
–নাহহহ(মাথা নাড়ালাম)
–তাহলে আমার ফেসবুক লগ আউট দিলো কে?
–তোমার ফেসবুক আবার লগ আউট দিবে কে?হুমমম?
আমি তো ফেসবুকই চালাতে পারিনা
–ওহ এই কথা?
বলেই আমাকে একটু রাগি ভাবে বলল
–আমার ফোনে হাত দিবা না,আর তুমি ফেসবুকে ডুকছো কেন?
–আসলে
(ধরা খেয়ে গেলাম)
–আসলে কি?
–এমনিতেই
–তুমি আমার ফোনের সবকিছু দেখে ফেলো নি তো
–ফোনে কি এমন ছিলো যে!আমি দেখে ফেলব
–এই ফোনে আমার জীবনটা লুকিয়ে রেখেছি৷
বলেই লাবন্য মনটা খারাপ করে চলে গেল৷ওপপস ওর মনটাই খারাপ করে দিলাম৷ও বুঝতে পেরে গেছে আমি ওর ফোন ধরেছি৷আর ভাবছি লাবন্যকে কি বলে দিবো?ওর স্বপ্নের রাজপুত্র তার সামনে থাকা এই আরমান?
তখনই আবার মনে হলো,এখন যদি ওকে সব বলে দেই৷তাহলে ও ভুল বুঝতে পারে,আর বলতে পারে ওর ফোন দেখেই আমি এগুলো বলছি৷তার চেয়ে ভালো প্লান মত কিছুদিন ফেসবুকে মজা করি৷তারপর টাইম বুঝে বলে দিবো৷হি হি হি
আর তখনই মনে হয়ে গেল৷লাবন্যর মনটা তো খারাপ করেই দিলাম৷আর ও তো এখন একটিভ আছে,তো এখনই আমি ফেসবুকে ডুকে ওর সাথে কথা বললে কেমন হয়?
হুম এটাই করা যাক ৷হি হি হি
“তারপরই ফেসবুক লগ ইন করলাম৷আর ডুকেই দেখলাম আমার পাগলিটা একটিভ আছে৷আর তখনই আমার পাগলিটাকে একটা মেসেজ দিলাম
–আসসালামু আলাইকুম(আমি)
–ওয়ালাইকুম আসসালাম,কেমন আছেন?কি করছেন?আর এত দিন ফেসবুকে আসেন নি কেন?কোনো প্রবলেমে ছিলেন নাকি?(ওপাশে লাবন্য)
হি হি হি পাগলিটা এক নাগাড়ে বলেই গেল৷আর বুঝতে পারলাম,আমার পাগলিটাও আমাকে কতটা ভালোবাসে!আর যখন ওর সামনে পরিচয় দিবো৷তখন তো আমাকে……
—কি হলো কথা বলছেন না কেন?প্লিজ বলুন,আপনার কিছু হয়নি তো?কেন এতদিন আসেন নি?(লাবন্য)
–আসলে একটু প্রবলেমে ছিলাম তো,তাই আসতে পারিনি
–কেন ?কি হইছে আপনার?কিছুই হয়নি তো?আপনি ঠিক আছেন তো?
–হুম আমি ঠিক আছি,ভালো আছি,আপনি কেমন আছেন?
–হুম,আপনাকে পেয়ে অনেক ভালো আছি
–আমাকে পেয়ে ভালো আছেন মানে?
–না কিছুনা
–কিছুনা মানে?বলুন বলছি(আমি তো জানি ও আমাকে ভালোবাসে)
–আসলে অনেকদিন ধরে আপনার গল্প পড়িনা তো,আর এখন আপনি এসে গেছেন,আর গল্পও পাবো,তাই অনেক খুশি হইছি আর কি
–ও তাই?
–হুম
(এহহহহহ পেত্নিটা কেমন মিথ্যা বলছে৷তার ভালবাসাকে পেয়ে যে এত খুশি সেটা বলছে না)
–কি হলো আপনি চুপ কেন?(লাবন্য)
–না ভাবছি,একটা মেয়ে আমাকে না পেয়ে এতগূলো মেসেজ,……..
–হুম,আসলে কি জানেন,অনেকদিন ধরে আপনাকে গল্প দিতে দেখিনি তো৷আর আপনার গল্প না পেয়ে,আমি আপনাকে মেসজ করেছি৷আর আপনিও তো একটা স্বার্থপর।
–আমি আবার কিভাবে স্বার্থপর হলাম(একটু মজা করেই বললাম)
–আপনাকে বলেছিলাম,আপনি কখনো ফেসবুকে আবার আসলে ,যেন আমার ফোনে একটা ফোন দেন,তাই ফোন নাম্বারটা দিয়েছিলাম৷কিন্তু আপনি ফেসবুকে এসেও তো একটা ফোন দিলেন না
–আরে আমি তো মনে করেছিলাম ফেইক
–হুম ভালো করছেন,আপনারা বুঝবেনই কি?আর আপনি মেসেজ বা ফোন দেননি বলেই ,সেদিনের পর থেকে প্রতিদিন ফেসবুকে এসে বসে থাকি,কখন আপনার একটা মেসেজ পাবো,সেই আশায়
–আমার আশায়?কিন্তু কেন?
–কেন আবার?আপনি আমার সবচাইতে প্রিয় রাইটার৷আপনার গল্প যেমন পছন্দ করি,তেমনি আপনাকেও রাইটার হিসাবে অনেক অনেক লাইক করি
—এহহহ লাইক করে?ভালোবাসে,সেটা বলছে না(মনে মনে)
–কী হলো?মেসেজ সীন করেও কি কথা বলবেন না?
–হুম৷
বলবো তো,অনেক কথা বলব
–সত্যি?
–হুম৷সত্যি
তারপর সেদিন লাবন্যর সাথে অনেকক্ষন কথা বললাম৷আর অনেক মজাও করলাম৷আর তখন বুঝতেও পারলাম,অচেনা একটা ছেলেকে না দেখেই লাবন্য কতটা ভালোবেসে ফেলেছে৷আর তখন তো আরও খুশি আর হেব্বি আনন্দ লাগতে শুরু করল৷যখন দেখলাম ওর অজানা সেই ছেলেটা আমি৷
হি হি হি
মজাই মজা,পেত্নি থুক্কু এমন একটা পাগলি পেয়ে গেলে আর কি লাগে তারপরেই তো………….
[
চলবে…..